সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

2009 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আলী হোসেনের ছোটগল্প : ঘোর

ঘোর ছোটগল্প : ঘোর আলী হোসেন তিনটে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের আপ বনগাঁ লোকাল পাঁচ নম্বর প্লাটফর্ম থেকে এখনিই ছাড়বে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মুনির দৌড়াতে শুরু করে। দৌড়ে ট্রেন ধরা তার নিত্য-অভ্যাস। হঠাৎ খেয়াল হয়, আজ তো সে একা নেই। কয়েক কদম এগিয়েই থমকে দাঁড়ায়। পিছিয়ে আসে। রাহুলের ডান হাতটা বাঁ-হাতে ধরে আস্তে আস্তে ট্রেনে ওঠে। রাহুল অসুস্থ। আপনি কখনও বনগাঁ লোকালে চড়েছেন? ঠিক ধরেছেন। আপনাকেই বলছি। চড়ে থাকলে ভালো, না চড়লে চলুন বেরিয়ে পড়ি। ধরুন, ট্রেনে চেপে আপনি মসলন্দপুর স্টেশনে নামলেন। ছোট্ট মফস্বল শহর। নামতেই শহরের যানজট আর দূষণ আপনাকে অক্টোপাসের মতো বেঁধে ফেলবে। এসব ঠেলে সোজা দক্ষিণমুখী রাস্তা ধরুন, বেশ কিছুটা এগোন অটো বা ট্রেলারে করে, দেখবেন সামনেই পড়বে বড়সড় বাজার। নাম বাগজোলা বাজার। কেন এমন নাম? এর সঙ্গে বাঘ বাবাজির পূর্বপুরুষের কোন সম্পর্ক ছিল কিনা? এসব জানিনে। বাজারে পৌঁছানোর আগেই, এএএইখানটায় থামুন। এটা কলসুর মোড়। এই দেখুন, মোড় থেকে ডানদিকে ওওই রাস্তাটা সোজা পশ্চিম দিকে গেছে। এটা ধরে বেশ কয়েক মাইল এগোলেই পরপর বেশ কটা গ্রাম পড়বে। কলসুর, চাঁড়াল আটি, বেলেখালি, পারপাটনা এই সব প্রত্যন্ত গ্...

নির্জনে নীল

নির্জনে নীল -  আলী হোসেন : স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার . কে যেন বলেছিলেন? কিছুতেই মনে করতে পারছেন না স্বরাজের মা। অথচ এই উক্তিটাই তাকে ছেলের নাম রাখার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। বেশ দেশপ্রেম আর স্বাধীনতার গন্ধ আছে নামটায়। অন্য একটা ব্যাপারও কাজ করেছিল তার মাথায়। স্বরাজের ওপর তার অধিকারটা তো জন্মগতই। কন্সেপটা বেশ নতুন – ভাবে স্বরাজের বাবা। বিরাজ রায়। সত্যিই তো, সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য বাবার ভূমিকা আর কতটুকু! সর্বসাকুল্যে পাঁচ বা দশ মিনিটের মেহনত। তারপর তাকে দশমাস দশদিন ধরে বুকের মধ্যে আগলে রাখে মা। একটা পাখি যেমন বাচ্চার ঠোঁটে ঠোঁট ঢুকিয়ে নিজের টোটায় টোটা ঢুকিয়ে নিজের খাবার বাচ্চাকে দেয়, মাও তেমনি নিজের খাবারের ভাগ দিয়েই তাকে একটু একটু করে বড় করে তোলে। পৃথিবীর পরিবেশের উপযুক্ত করে তোলে। হ্যা, উপযুক্ত করে তোলে। তবু দেখুন, পৃথিবীর মুখ দেখার মুহুর্তে সে চিলচিত্কারে কেঁদে ওঠে। ডাক্তারি শাস্ত্র নাকি এটাই স্বাস্থ্যকর বলে ভাবে। কারণ, মায়ের গর্ভে সুস্থ থাকলেই একটা বাচ্চা পৃথিবীর সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশের আঁচ পেয়ে ভয়ে কেঁদে ওঠে। গর্ভের যে নিরাপত্তা বলয়ে সে এতদিন ছিল ওই মুহূর্তে সে তা হারিয়ে ফেলে। ...

দায়

আলী হোসেনের ছোটগল্প ।  দায় ।  দুপুরের ঝাঁ-ঝাঁ রোদের তেজ কিছুটা কমেছে। রোদের উজ্জ্বলতা নেই, একটু আগে যেমন ছিল। সবেমাত্র শেষ হয়েছে জোহরের আজান। কি হিন্দু, কি মুসলমান - সকলেই কাজের ছুটি করে ঐ আজান শুনে। অভ্যাসটা এমন, আজানের আওয়াজ কানে যেতেই পেটের নাড়ি মোচড় দিয়ে ওঠে। প্যাভলভের প্রতিবর্তক্রিয়ার প্রভাব অজান্তেই অনুভব করে সেলিম। এক অদৃশ্য টানে, পায়ের ধাপ অনেকটা লম্বা হয়ে যায় ওর। সেলিম হন হন করে হাটতে থাকে, বাড়ির পথে। মাথায় আনকোরা নতুন টোকা। গত হাটে কেনা। পাট খেতের যা গরম, মাথার ওপর একটু ছায়া না থাকলে প্রাণটা যেন আই-ঢাই করে। রবিবারের হাট খরচ থেকে বাঁচিয়ে তাই এটা কেনা। হাতের নিড়ানিটা চকচক করছে। সূর্যের আলো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে নিড়ানির পাতায় ঘা খেয়ে। সেলিম থেকে থেকে অকারণেই যেন চোখ ফেলছে এই চকচকে নিড়ানির ডোগায়। বাঁহাতে মাথার টোকাটা খোলে সেলিম। সঙ্গে একটি স্বস্তির প্রশ্বাস ফেলে শব্দ করে। বসত বাড়ির চালের সঙ্গে খড়ের চাল লাগিয়ে তৈরি রান্না ঘর। তারই বেরিয়ে পড়া বাঁশের গায়ে ঝুলিয়ে রাখে সেটি। নিড়ানিটি চালের বাতায় গুঁজতে গুঁজতে হাঁক দেয়, ‘কই, কনে গেলি’। কাঁধের গামছাটা ভাঁজ করে পাখার মত বুকের কা...

রচনাকাল অনুযায়ী গল্প : পড়ুন 👉 এখানে ক্লিক করে