সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এক এক্কে এক

এক এক্কে এক। ছোট্ট বেলা নামতা পড়ার সময় এভাবেই শুরু করত মান্তু। তখন জানতো না কি এর মানে, কেনই বা পড়তে হয়। মা বলতেন, নামতা হল অঙ্কের মাথা। কিম্বা মেরুদণ্ডও বলতে পারিস। এটা ঠিকঠাক না শিখলে অঙ্ক মেলে না। যখন প্রাথমিক স্কুল ছেড়ে মাধ্যমিকে পৌছেছে, তখন মায়ের কথার মানে বুঝেছে মান্তু। কিন্তু পরিণত বয়সে এসে, আজ বুঝেছে এর অন্য মানে। এটা না জানলে, জীবনের মানেটাই পালটে যায়। মিলতে চায় না জীবনের অঙ্কটাও।

মান্তু ক্লাস এইটে। ক্লাসে সেলাই দিদিমনি, ফ্রেঞ্চনটের গীট ধরে আটকানোর চেষ্টা করছেন। বোঝাচ্ছেন, কিভাবে একে কব্জা করতে হয়। মান্তু কিছুতেই এই গিঁটকে কব্জা করতে পারছেনা। মাথার ওপর বোঁবোঁ করে ঘুরছে পাখা, অথচ ঘামের স্রোতে ভাঁটার টান নেই মোটেও। বাইরের বাতাসে উত্তাপের পারদ নিশ্চয়ই লু-লেবেল ছাড়িয়েছে। বাতাসের শুষ্ক বুকে তরঙ্গ তুলে সে ছুটে চলেছে শরীর জুড়াতে আন্য কোথাও, অন্য কোনখানে।

প্রচণ্ড রোদের মধ্যে চাঁদনি থেকে দোকানের মাল নিয়ে ফিরছিল ফারহাদ। হঠাৎই চরকির মত ঘুরে গেল মাথাটা। পিচ-গলা রাস্তায় আছড়ে পড়লো মস্ত শরীর। পথ-চলতি নজর চকিতে ঘুরে এল ফারহাদের দিকে। কে বলে কলকাতার হৃদয়ে উষ্ণতার অভাব? মুহূর্তেই জড় হয়ে গেল একদঙ্গল কম বয়সি ছেলে। পথচলতি ট্যাক্সি থামিয়ে সোজা হাসপাতাল। মাথার আঘাতটা এতটাই গুরুতর ছিল যে, হাতপাতালে নিয়েও লাভ হল না। এমার্জেন্সি বিভাগের ডাক্তার এসে বললেন, সানস্ট্রোক। পথেই ফুরিয়ে গেছে প্রাণ-সখা, প্রাণবায়ু।

মান্তু সেদিন খুব কেঁদেছিল। মা-বাবার একমাত্র সন্তান সে। তাই খুবই আদরে কেটেছে শৈশব, কাটছিল কৈশোরও। আব্বু ছাড়া মান্তু একপাও চলতে পারে না। স্কুলের পড়া থেকে তিন বেলা খাওয়া, সব কিছুতেই ছিল তার সোহাগের ছোঁয়া। এর অন্যথা হওয়ার জো-ই ছিল না। কিন্তু আজ? শৈশবের স্বর্গরাজ্য থেকে কৈশোরেই হল মহাপতন। যেন একাকিত্বের গহিনগাঙে নির্বাসিত হল মান্তু।

আজকাল একাকিত্বটা বড় বেশি আগ্রাসী চেহারা নিয়েছে। প্রতিটা মুহূর্ত যেন গ্রাস করতে আসছে তাকে। হাসপাতালের প্রসুতি বিভাগের বেডে শুয়ে সদ্যজাত মেয়ের দিকে নিষ্পলক চেয়ে ভাবছে মান্তু। নাকে আতুরের গন্ধ, চোখের কোনে শিশিরের কনার মত জমে ওঠা জল। সেই জলেই যেন প্রতিবিম্বিত হচ্ছে মায়ের মুখ। মায়ের প্রতি অভিমান, অনুযোগ ফিরে ফিরে আসছে ফ্লাস ব্যাকে। কতবার আধো আধো স্বরে মাকে বলেছে, আমাকে এট্টা ভাই এনে দাও না মা। না হয় এট্টা বুনু। কচি মুখে এভাবেই পাকা পাকা কথা বলত মান্তু। প্রশ্ন করতো মায়ের কাছে, আমি কার সঙ্গে খেলি বলতো মা!

অগ্নিমূল্যের বাজারে তিনজনের আহার যোগাতেই যেখানে হিমসিম খাচ্ছে মানুষটা, সেখানে আরও একজনের আগমন! কখনই নয়। তার ওপর জুটেছে দামড়া ছেলেটা, বোঝার ওপর শাকের আটি।

ফারহান সম্পর্কে ফারহাদের ফুফুতো ভাই। পড়াশোনার সাথে সাথে পেটভাতায় ফারহাদের দোকানে কাজ করতে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল সারাইয়ের কাজটাও শিখবে।

মা না হলেও, মান্তু খুবই খুশি হয়েছিল, ফারহান আসায়। সম্পর্কে সে চাচা। কিন্তু বাস্তবে বন্ধুরও বাড়া। বন্ধুর মতই মান্তুর ন্যায্য-অন্যয্য সব দাবিই সে মেটায় নির্দ্বিধায়। সেদিন, যেদিন মান্তু সাবালক হল, উরু বয়ে গলগল করে নামছিল তাজা রক্ত। বন্ধুর মতই সে পাজাকোলা করে দৌড়েছিল ডাক্তারের কাছে। ডাঃ আলি পাশকরা নয়, কিন্তু জুহুরির চোখ ছিল তার। মুচকি হেসে বললেন, তুমি বড় হয়ে গেছ মান্তু। বাড়ি গিয়ে মাকে বলো। উনিই তোমাকে বলে দেবেন কি করতে হবে।

ফারহান খুব রেগে গেল। ভাবল, ডাক্তারটা বড্ড হারামি তো, ওষুধ না দিয়েই বাড়ি পাঠাল! কষ্ট পেল মান্তুর জন্য, হঠাৎ কি-না-কি হয়ে গেল ভেবে। আর মান্তু, লজ্জায় রাঙা হয়ে গিয়েছিল চোখ-মুখ, কদিন তো মুখ তুলে তাকাতেই পারেনি ফারহানের দিকে। মা বললেন, ঐ দেখ মান্তু, রাস্তার ওধারে কৃষ্ণচুড়ায় লাল ফুলের ঢল নেমেছে। একখণ্ড লাল কাপড় মালকোচার মত বেঁধে দিয়ে বললেন, সাবধান! বসন্তের বাতাসে মদিরার গন্ধ, ম ম করছে চারিদিক। ফি মাসে এভাবেই বেধে রাখবি একে। আর দেখিস, কোন কীট যেন না কাটে, না বসে কোন ভ্রমর, সদ্য ফোটা কুঁড়িতে।

আজ ফারহানের পথ চেয়ে বসে আছে মান্তু। বড় ইচ্ছা করছে তাকে দেখতে। বন্ধুর মতো কাছে পেতে চাইছে অভাগি মন। অথচ দেখ, তার দেখা নেই। মনের কোনে উঁকি মারছে একরাশ প্রশ্ন। তারই একটা, কেন এল না ও?

আব্বাকে হারানোর পরপরই মাকে ধরল কালরোগে। কেমো দেয়া হল। নামি-দামি ইঞ্জেকশন দেয়া হল। কিছুতেই কিছু হল না। মান্তুর অবস্থা এখন শিকড়হীন গাছের মত। পরগাছার মত ফারহানকে  আকড়ে ধরা ছাড়া বিকল্প খুঁজে পেল না সে। তারই ফসল আজ মান্তুর কোলে। প্রথম যেদিন সে কাছে এসেছিল, কোন দ্বিধা তো সেদিন দেখেনি! মান্তু তাকে প্ররোচিত করেছিল ঠিক, কিন্তু জোর তো করেনি। সম্পর্কের পুরানো গেরো খুলে নতুন করে গিট তো সে-ই দিয়েছিল। বলেছিল, সম্পর্কের কাঁটাকে মন থেকে উপড়ে ফেলতে পারলে পাপবোধ থাকে না। জীবন খাতার নতুন পাতায় সম্পর্কের এ-হেন আঁকিবুকি নৈতিক কিনা তা নিয়ে অস্থির হওয়াটাও নেহাতই ছেলেমানুষি - এ তো তারই পরামর্শ। তাহলে?

প্রথম যেদিন গা’টা গুলিয়ে উঠেছিল, আনন্দে আটখানা হতে ইচ্ছা করছিল মান্তুর। ভেবেছিল, ফারহানও ওর মতোই ভাবছে। খবরটা ওকে দেওয়ার জন্য মনটা বড্ড ব্যাকুল হয়ে উঠল। কিন্তু তেমন কিছু তো হল না। খবরটা শোনার পর কেমন যেন গুটিয়ে গেল ফারহান, ভয় পাওয়া শামুকের মত।

মান্তু বলল, তুমি খুশি হও নি?

ফারহান খানিক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর বলল, আহ্লাদিত হওয়ার মত তো কিছু দেখছি নে!

ভয়টাই বা কিসের? মান্তু খুব করে ভেবেছে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে অনেকদিন। মায়ের মৃত্যুর পর ছেড়েই দিয়েছে।

‘সম্পর্কে ভাই হলিও মানা যেত। করলি করলি একেবারে চাচাকে বে করলি? তোবা তোবা!’ যাদের কাছের মানুষ করে নিতে চেয়েছিল মন, বসাতে চেয়েছিল পরম আত্মীয়ের আসনে, তারা এভাবে জায়েজ-নাজায়েজের প্রশ্ন তুলে সরে গেল।

ফারহানের মা বললেন, ‘হ্যারে বেহায়া মাগি, তুই নাকি শিক্কুতো মেয়ে। অনেক নেকাপড়া শিকিচিস। তবু আমার সাদাসিদে ছেলের মাথাটা গিলে খালি!তোর আক্কেলেটা কি শুনি? বলি জাত-ধর্মের কথাটাও ভাবলি নে একবার!’ ছোট ননদ ফুলি। সে মায়েরও এককাঠি উপরে, ‘বাপ-চাচাও মানলি নে তুই, ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা! অমন শিক্কার মুকি আগুন’।

মান্তু মুখ নিচু করে। মনের কোনে জমাট বাধে একরাশ প্রশ্ন। তবে কি রাতজাগা শিউলির মত আমার জীবনের প্রভাতবেলাটাই কালবেলা হয়ে গেল? সে তো চেয়েছিল স্বপ্নের শিউলিটাকে ফুলে ফুলে ঢেকে দেবে। তার গন্ধে মাতাল ভ্রমরকে আঁকড়ে স্বপ্নের পানসি ভাসাবে সজনহীন সাগরে। আজ কি তার সেই স্বপ্নের পানসি দিক হারাচ্ছে?

দু’দিন ধরে জল ভাঙছে মান্তুর। তবু চুপচাপ বসে থাকল ফারহান? কানে তুলল না কোন কথা। তারপর কি মনে হল, দুদিন পর নিয়ে এল হাসপাতালে। ডাক্তার সতর্ক করলেন, রাত্রে একজনকে হাসপাতালে থাকতে হবে। মা-বাচ্চা দু’জনেরই জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে। প্রয়োজনে সার্জারি করতে হবে।

ফারহান কি রাতটুকু হাসপাতালের থাকতে পারত না! মান্তু নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে, নিশ্চয় কোন অসুবিধার মধ্যে রয়েছে মানুষটা।

জীবনের চেয়ে জরুরী আর কিছু কি হয় ম্যাডাম? ডাক্তার প্রশ্ন তোলেন।

কিন্তু...

কোন কিন্তু নেই। এসেছেন দেরি করে... তার উপর স্বামী দেবতাটি বেপাত্তা... এভাবে...

মান্তু বলল, না...মানে... আমরা তো জানতাম না ব্যাপারটা।

মেয়ে-মানুষের পরপুরুষের কাছে স্বামীর নিন্দা সইতে নেই। তাই ফারহানের অবহেলার অভিযোগ এড়িয়ে যায় মান্তু। কিন্তু বুকের ভিতরটা অসম্ভব ভারি হয়ে ওঠে। মনে মনে ভাবে, আমি কি এতটাই পাপ করেছি খোদা, যে মনের কষ্ট বোঝার মতো কাউকেই রাখলে না এ-জগতে! ফারহানকে আঁকড়ে ধরা ছাড়া কিইবা করতে পারতাম আমি?

আপনি কি একা থাকেন? পরিবারে জানা-বোঝা কেউ নেই?

মাথা নিচু করে মান্তু।

ও! বিয়ে করেই বাড়ি থেকে সরে পড়েছেন! আরে ম্যাডাম শশুর-শাশুড়ী, মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন এদেরও দরকার হয় জীবনে। একা একা বাঁচা যায় না।

মান্তু জানে তার একা হওয়ার কারণ। ফারহান বুঝেছে এজন্য দায়ি সে নিজে। নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মেরেছে। ‘কিন্তু তার চেয়েও দায়ি মান্তু। তাকে বিয়ে না করলে আমি একা হোতাম না। কক্ষনো না’। স্বগতোক্তিতে বিরক্তির ঝাঁজ উর্ধমুখি। রাত্রে হাসপাতালে থাকার দায়টাও এড়িয়ে যায় নির্দিধায়।

মান্তুও মানে, তাকে বিয়ে করার কারণেই ফারহান আজ একা। তার মা আছে, বাবা আছে। আছে আত্মীয়স্বজনও। তবুও সে একা হয়ে গেল। মান্তুর যদি একজন দাদা কিমবা ভাই থাকত, নিদেনপক্ষে একটা বোন, ফারহানের সঙ্গে সম্পর্কের এই ভাঙা-গড়ার খেলায় নামতে হত না হয়তো তাকে। এই দুর্দিনও হয়তো আসতো না। মায়ের প্রতি অভিমানে চোখের পাতা ভিজে আসে মান্তুর। বিন্দু বিন্দু জল ফোটা হয়ে জমে ওঠে চোখের কোনে। তারই একফোঁটা গড়িয়ে নামে চিবুকে; অবশেষে মেয়ের মুখে। ঘুমিয়ে থাকা কচি মুখের চেহারায় আশঙ্কার ভাঁজ পড়ে। চমকে ওঠে মেয়ে। মান্তু সেদিকে চেয়ে থাকে অপলক। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে জলটা মুছে দেয়। যেন মেয়েকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। অস্ফুটে বলে, এক এক্কে এক, এক মানে একা...। দরজা-জানালা-হীন বদ্ধ-ঘরের মত দম বন্ধ হয়ে আসে তার। বুকের ভেতরটাও যেন টনটনিয়ে ওঠে। সেখান থেকেই অতিকষ্টে বেরিয়ে আসে আরও গুঁটি কয়েক শব্দ : আমি তোকে একা রেখে যাব না রে মা। কিছুতেই না।

******......******

মঙ্গলবার, 03 সেপ্টেম্বর 2013

9.52.58 অপরাহ্ন

প্রকাশিত ঃ দিন দর্পণ - ইদ সংখ্যা - ২০২২

বই পোকার কলম এখানে ক্লিক করুন

মন্তব্যসমূহ

রচনাকাল অনুযায়ী গল্প : পড়ুন 👉 এখানে ক্লিক করে

আলী হোসেনের জনপ্রিয় গল্পগুলো পড়ুন

নূরের জ্যোতি

কেমনে রাখবো কুল / পটল গাছে হয়না পটল /  না ছোঁয়ালে ফুল -- সুর করে  গান গাই গল্পটির ইউনিকোড ফন্টে খুব শিঘ্রি প্রকাশিত হবে। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। Saturday, March 07, 2009 11:20:42 AM Ali Hossain H/O : Asraf Ali Nasker Brahmapur, Battala Bazar ( Near Post Office ) Kolkata-7000 96 Phone: 9432983876

মড়ক - আলী হোসেন

মড়ক আলী হোসেন      কোনটা সময় আর কোনটা অসময়, সময়টা চলে না গেলে যেন বোঝা যায় না। বলা ভালো, ঠিকঠাক বোঝা যায় না। বিজ্ঞজনেরা তো তা-ই বলে। রতন বিজ্ঞজনও নয়, সময়ের গলিঘোঁজ খুঁজে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও তার কম্ম নয়। তবে তার সময় যে ভালো যাচ্ছে না, সে বিলক্ষণ জানে। জানে বলেই বোধ হয় বিষন্ন হয় মন, কখনও সখনও ভারিও। বিশেষ করে বাড়ির উল্টোদিকের ফুটে আকাশ ছোঁয়া মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানির বিল্ডিংটা দেখলেই তার বুকের ভেতরটা যেন চিনচিন করে ওঠে।      কিন্তু মন খারাপ করে যে কোন লাভ নেই। বাবা পরেশ পাড়ুই বলতেন, ‘কপালের লিখন বল বা ভাগ্যের চাকা – কোনটারই নিয়ন্ত্রন আমাদের হাতে নেই’। রতনেরও তাই মনে হয়। না হলে কি আর ওকে মোটর মেকানিক হয়ে জীবন কাটাতে হয়? সারাদিন গ্যারেজে কাজ, তারপর কালিঝুলি মেখে ভূত হয়ে বাড়ি ফেরা। কবে কবে যেন গায়ের রংটাই গেল পালটে। মা বলে, বাবার মতই গায়ের রঙ ছিল ওর। পড়াশুনায়ও দারুণ। বাবার ইচ্ছা ছিল, ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে; রতনও তাই ভাবতো। কিন্তু ভাবলেই কি আর সব হয়? কপালই তো ডাঁড়াশের ইঁদুর গেলার মত মোড়া মেরে ভরে দিল গ্যারেজে। তাই ডাক্তার হয়ার স্বপ্ন, ভাঙলো মোটর মেকানিক হয়ে।      রতনের জীবনে সেই শুরু অসময়ের

জলপট্টি

আলী হোসেনের ছোটগল্প - জলপট্টি সেদিনের কথাগুলো ভাবতে বসলে মায়ার চোখ দুটো ভিজে যায়। সবে সুখের মুখ দেখেছে ওরা। প্রচণ্ড দুর্দিনেও যারা মাটির টানকে উপেক্ষা করতে পারে নি, অসময়টা যখন কাটতে চলেছে, ঠিক তখনই শিকড়টা গেল কেটে। যেন প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস থেমে যাওয়ার মুখেই  লাটাই থেকে সুতটা ছিড়ে গেল। সুত-কাটা ঘুড়ির মত পাক খেতে খেতে দশ-পুরুষের ভিটে ছেড়ে এসে পড়ল কলকাতায়; কংক্রিটের জঙ্গলে। যারা ভরসা দিল, ‘পথের শেষ কোথায়’ দেখাবে, তারা কেমন সরে গেল সেই পথেই কাটা রেখে। পরেশের কথায়, ‘না রিফিউজি হলাম, না পেলাম নিজের জমি-জিরেত বিকিয়ে কেনা জমির দখল’। তাই চোখের কোন থেকে জলের ক্ষরণ কমে গেলেও বুকের ভেতরের গভীর ক্ষত এখনও শুকোয়নি মায়ার। তবে এ ক্ষতে সুস্থতার প্রলেপ পড়েছিল একবার। নয় নয় করে সেও বছর পনের আগের কথা। পরেশ তখন ফুটপাতের সব্জিওয়ালা, রতন ক্লাস ফোর-এ। ‘একখান কথা কইবো’? পরেশ চোখ তোলে। চোখে চোখ রেখে ঘাড় নাড়ে; তার মানে, ‘বলুন’। ‘আপনে কি নতুন বাংলাদেশ থিকা আইছেন’? পরেশ এবারও ঘাড় নাড়ে, মানে, ‘হ্যাঁ’। তোমার লগে কতা কইয়া, চাল-চলন দেইখ্যা তো লেহাপড়া জানা মনে অইতাছে। আজ্ঞে, ইন্টারমিডিয়েট পাস। চাকরি কোরবা? পরেশ মাথ