সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খোঁজ : প্রথম পাতা

গল্প : খোঁজ - আলী হোসেন। প্রথম পাতা

( গল্প সংকলন : দ্বিতীয় পিতা )

শুরু থেকে পড়ছেন

আগের পাতা                  গল্প সংকলন                 দ্বিতীয় পাতা

কীবোর্ডে স্ট্রোকের আওয়াজ। খট্-খট্‌, খট্, খট্-খট্-খট্, খট্-খট্,....। এত জোর যেন কান-মাথা ধরে যায়।! দশ-দশটি কীবোর্ড। চলছে এক সাথে। মাথার সাধ্য কি, না ধরে যায়!। এর মধ্যে ঋদ্ধির স্টোকের জোর, একটু বেশিই। বিগত দশ বছর ধরে চলছে এই কী-আঙ্গুলের ঠোকাঠুকি। তাই গা-সহা হয়ে গেছে সব। ক্রমে গভীর হয়েছে হৃদ্যতা, ঋদ্ধির সাথে কীগুলোর। কিন্তু পাশের জনের সহ্য হবে কেন?

হ্যালো, শুনছেন?

ঋদ্ধি বুঝতে পারেন, ওকেই উদ্দেশ্য করা হচ্ছে।

একটু আস্তে স্ট্রোক দিন না! বাঁ পাশের সিটে বসা ছিপছিপে মেয়েটা বিরক্ত হয়। কীবোর্ডের খট খট আওয়াজ মাইক্রোফোন যেন লুফে নিচ্ছে। তাই সাথির কথার চেয়ে ওটাই বেশি পাচ্ছে পিউ। পিউ সাথির চ্যাট-ফ্রেন্ড। ভয়েজ চ্যাটেই ওরা বেশী স্বাচ্ছন্দ্য।

আস্তে স্ট্রোক দেওয়ার চেষ্টা বরাবরই করে ঋদ্ধিনাথ। কিন্তু কখন যে তা বেড়ে যায়, শত চেস্টা করেও খেয়াল রাখতে পারে না। তাই তড়িঘড়ি স্যরি বলে নেয়।

আজও স্যরি বলেছিল। কিন্তু প্রত্যুত্তরে কানে এলো একটা আদ্ভুত টিপ্পনি। ডানপাশ থেকে। ‘বয়স হলে কি হবে, আঙ্কেলের হাতের আর মনের জোর এখনও কমে নি। দেখছেন না, কেমন কচি কচি মেয়েদের সঙ্গে চ্যাট করছেন।

সাথি বুঝে ফেলে, অযাচিত সহযোগিতা। তাই নিরুত্তোর থাকে। শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে বাম গালাসি টেনে এক অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে। বুঝিয়ে দেয়, প্রয়োজন ছিল না।

ঋদ্ধিনাথও ঘাড় ঘোরায়, দু’পাশটা দেখে নেয়। মুহূর্তে ঠোট দুটো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ওর। কি যেন ভাবে, তারপর মুখ নামিয়ে পুনরায় কীপ্যাডে আঙুল রাখে। এবার, আরও দ্রুত ছুটতে থাকে আঙুলগুলো। কীগুলোর বুক ছুয়ে যাওয়া খরর-খরর আওয়াজ আর গভীর হয় । কেন জানি না, আজকাল এই কীগুলোই ওর খুব কাছের হয়ে উঠেছে। এদের ছোঁয়ায় আশার আলো দেখে, আওয়াজে শোনে বাঁচার আশ্বাস। তাই এধরনের কথাগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতে ওর কষ্ট হয় না। হলেও তাকে মনের দখল নিতে দেয় নি কোনদিন। আজও দেবে না ভেবে ছিলো। কিন্তু......?

জানিস বিট্টু,  ঋদ্ধির ভাবনায় ছেদ পড়ে, বয়স হলে ভিমরতি হয়। যেমন আমার হয়েছে। ডান পাশে চ্যাটিং-এ বসা বছর বাইশের ছেলেটি এবার উদ্দ্যেশ্য পাল্টে ফেলে। বিধেয় ঠিক রেখে বলে, দেখনা, থামচ-আপ-এর মুদ্রাকে কোল বরাবর উল্টে দেখায়, অল্প বয়সি মেয়ে দেখলেই আমার ইয়েটা যেন টনটন করে ওঠে।

বিট্টু বলে, যা!

হ্যাঁ-রে। দেখ না, আমার চ্যাটরুমে কোন ছেলের ছবি নেই।

ওমা! তুই জানিস না, প্রেমের আবার বয়স হয় নাকি? আর মেয়ে ছাড়া প্রেম? তাও আবার এই বয়সে!

একসঙ্গে হো-হো করে হেসে ওঠে দু’জনে। হাসি থামিয়ে বলে, তা’লে তুই বলচিস, এটা ভিমরতি নয়!

য়ু-হু, প্রেমরতি। শুধু একটু অ-সময়ে।

ঋদ্ধিনাথের হাতের আঙুল গুলো জড়ো হতে শুরু করে। কনিষ্ঠা থেকে পর্যায়ক্রমে; মুষ্টি আকারে। তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ায় সে। এবারও কি-একটা ভাবে। তারপর দ্রুত বেরিয়ে পড়ে কাফে থেকে।

আগের পাতা                  গল্প সংকলন                 দ্বিতীয় পাতা

মন্তব্যসমূহ

রচনাকাল অনুযায়ী গল্প : পড়ুন 👉 এখানে ক্লিক করে

আলী হোসেনের জনপ্রিয় গল্পগুলো পড়ুন

নূরের জ্যোতি

কেমনে রাখবো কুল / পটল গাছে হয়না পটল /  না ছোঁয়ালে ফুল -- সুর করে  গান গাই গল্পটির ইউনিকোড ফন্টে খুব শিঘ্রি প্রকাশিত হবে। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। Saturday, March 07, 2009 11:20:42 AM Ali Hossain H/O : Asraf Ali Nasker Brahmapur, Battala Bazar ( Near Post Office ) Kolkata-7000 96 Phone: 9432983876

জলপট্টি

আলী হোসেনের ছোটগল্প - জলপট্টি সেদিনের কথাগুলো ভাবতে বসলে মায়ার চোখ দুটো ভিজে যায়। সবে সুখের মুখ দেখেছে ওরা। প্রচণ্ড দুর্দিনেও যারা মাটির টানকে উপেক্ষা করতে পারে নি, অসময়টা যখন কাটতে চলেছে, ঠিক তখনই শিকড়টা গেল কেটে। যেন প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস থেমে যাওয়ার মুখেই  লাটাই থেকে সুতটা ছিড়ে গেল। সুত-কাটা ঘুড়ির মত পাক খেতে খেতে দশ-পুরুষের ভিটে ছেড়ে এসে পড়ল কলকাতায়; কংক্রিটের জঙ্গলে। যারা ভরসা দিল, ‘পথের শেষ কোথায়’ দেখাবে, তারা কেমন সরে গেল সেই পথেই কাটা রেখে। পরেশের কথায়, ‘না রিফিউজি হলাম, না পেলাম নিজের জমি-জিরেত বিকিয়ে কেনা জমির দখল’। তাই চোখের কোন থেকে জলের ক্ষরণ কমে গেলেও বুকের ভেতরের গভীর ক্ষত এখনও শুকোয়নি মায়ার। তবে এ ক্ষতে সুস্থতার প্রলেপ পড়েছিল একবার। নয় নয় করে সেও বছর পনের আগের কথা। পরেশ তখন ফুটপাতের সব্জিওয়ালা, রতন ক্লাস ফোর-এ। ‘একখান কথা কইবো’? পরেশ চোখ তোলে। চোখে চোখ রেখে ঘাড় নাড়ে; তার মানে, ‘বলুন’। ‘আপনে কি নতুন বাংলাদেশ থিকা আইছেন’? পরেশ এবারও ঘাড় নাড়ে, মানে, ‘হ্যাঁ’। তোমার লগে কতা কইয়া, চাল-চলন দেইখ্যা তো লেহাপড়া জানা মনে অইতাছে। আজ্ঞে, ইন্টারমিডিয়েট পাস। চাকরি কোরবা? পরেশ...

খোঁজ : চতুর্থ পাতা

গল্প : খোঁজ - আলী হোসেন। চতুর্থ পাতা ( গল্প সংকলন : দ্বিতীয় পিতা ) শুরু থেকে পড়ুন আগের পাতা                          গল্প সংকলন                       পঞ্চম পাতা ঋষিতা আজ নেই। সশরীরে। কিন্তু সে তার জীবন থেকে একেবারে বিচ্ছন্ন হয়ে যায় নি। হয় নি, তা আরও একবার প্রমান হয়ে গেল। আজ। আজও সে হেরে গিয়ে জিতে এসেছে। সে চাইলেই বিট্টুকে সপাটে একটা ঘুষি চালিয়ে দিতে পারতো। নিদেনপক্ষে একটা চড়ও। সে সামর্থও তার আছে। কিন্তু তারপর? বিট্টুরা কিভাবে রিয়্যাক্ট করত! এখন ভাবতেই শিউরে ওঠে শরীর। মধ্য-পঞ্চাশের ঋদ্ধিনাথ। পাঁচ বছর হল ঋষিতাও গত হয়েছে। ঈশিতা তো থেকেও নেই। তাই কোন পিছুটান তো তার ছিল না। তবু পারে নি। আর এতেই কি প্রমান হল না ঝগড়া নেই মানে ঋষিতা নেই, এও সম্ভব। ঋষিতার মূল্যায়ন এভাবেই করে এখন। ভাবে, জীবনের ধর্মও জলের মত। যে পাত্রে যায়, তার আকার ধরে। সময়-পাত্রে এক সময় সবই সয়ে যায়। ঈশিতাকে হারিয়ে যে শুন্যতা, তাও এক সময় সয়ে গিয়েছিল।  ভরে দিয়েছিল ঋষিতাই। কিন্তু বাইপাসের...