সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খোঁজ : পঞ্চম পাতা

গল্প : খোঁজ - আলী হোসেন। পঞ্চম পাতা

( গল্প সংকলন : দ্বিতীয় পিতা )

শুরু থেকে পড়ুন

আগের পাতা                  গল্প সংকলন                 ষষ্ঠ পাতা

খানিক পরেই একটা ইমেল এল। সেটাও বাংলায়। কিভাবে কন্ট্রোল প্যানেলে গিয়ে ‘রিজিওনাল এণ্ড অপশন’ মেনুতে ঢুকে বাংলা লেখার কনফিগারেশন করতে হয় তার বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে। সঙ্গে স্টার্ট মেনু থেকে কিভাবে অন-স্ক্রিন-কীবোর্ড এক্টিভ করবে তার বিবরণ, সঙ্গে কীবোর্ডের লে-আউট। এরপর থেকে বাংলাতেই আড্ডা চলে, লিপির সাথে। ফোনেও কথা হয়। তবে কম।

কী কর তুমি?

কেন, কাজ করি। লিপি তৎক্ষণাত উত্তর পাঠায়।

বেঁচে থাকতে হলে সাবাইকে কিছু না কিছু তো করতেই হয়। সেটা জানার জন্য নিশ্চয় প্রশ্নটা করিনি?

তবে?

জানতে চাই, কী কাজ কর।

না বললে বন্ধুত্ব রাখবে না?

প্রশ্নের মধ্যে তেমন কোন ইঙ্গিত আছে কি?

জানি না। তবু ভয় করে।

চ্যাট বক্সে কথাগুলো লিখতে গিয়েই গলা ধরে আসে লিপির। মনে মনে ভাবে, সেই ভয়েই তো এড়িয়ে যাই উত্তর। লিপির মনে আছে, বাবা বলতেন মানুষের জীবনে ভাগ্যের কোন ভুমিকা নেই। সুখ-দুঃখ্য কর্মের ফল। সুখ ইকুয়াল্টু  ভুল নয়। ভুল ইকুয়াল্টু দুঃখ্য। সে ভুল নিজের হতে পারে, হতে পারে পরেরও। মা মানতেন না কথাটা। এনিয়ে তুমুল বিতর্কও হতে দেখেছে দুজনের। আসলে মানুষ নিয়ন্ত্রন বহির্ভূত কার্যক্রমকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেয়। সেটাকেই সে কপাল বলে সান্তনা খোঁজে, কিম্বা অক্ষমতাকে আড়াল করে। বাবার কথাগুলো এখনও কানে বাজে লিপির। ভেবে পায় না, বাবা আর মায়ের কথার মধ্যে বিরোধ কোথায়! সে যে জেদ ধরেছিল, তা তার কপাল? না ছোট্ট ভুল? ছোট্টবেলার এই ভুলটার জন্যই কী এক সময় পরগাছার মত জীবন কেটেছে ওর? না কি কপাল দোষেই মুলগাছটা মরলো আর জীবন হয়ে গেল অবলম্বনহীন আলকলতা? চোখের সামনে ভাঙা ভাঙা ফ্রেমে ঘটনাগুলো এখনও জীবন্ত হয়ে ওঠে মাঝে মাঝে।

ও তখন ক্লাস ওয়ান কিম্বা টু’তে পড়ে। বাবা মায়ের সঙ্গে বই মেলায় এসেছে। সবাই বলে ও নাকি খুব পাকা। কেন ওকে সবাই পাকা বলে? বোঝে না। কিন্তু পরিস্কার মনে আছে, বড়দের মত কথা বলতে, আর কাজ করতে, ওর খুব ভালো লাগত। আশেপাশের সবাই একা একা হাঁটছে দেখে বায়না ধরলো, আমিও একা একা হাতবো।

কোন মতেই সেদিন বাবার হাত ধরে নি লিপি। কিন্তু তখন কি ও জানতো এই জেদই তার কাল হবে? চলতে চলতে হঠাৎ লোকজন ছুটতে শুরু করে। মূহুর্তে পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন ময়দানের আকাশ কালো ধোয়ায় ভরে গেল। আগুন...আগুন চিৎকারে কানে তালা লাগার অবস্থা। তারপর আর মনে নেই। জ্ঞান ফিরলে দেখলো, বাবা মা পালটে গেছে। মা হয়ে গেছে আম্মি, বাবা আব্বা।

সেই শুরু তার বেঁচে ওঠার নতুন লড়াই। ইংলিশে অনার্স পড়ার সময় আব্বা মারা গেল। তার আগেই আম্মিকে হারিয়েছে, ব্রেষ্ট কান্সারে। দু’মুঠো খাওয়া-পরা, আর পড়ার খরচ মেটানোর দায় এখন নিজের কাঁধে। শুরু হলো আর এক লড়াই, নতুন করে পথ-হাঁটা। পড়া শেষ করে একটা চাকরি যোগাড় করতে পারলেই এ হাঁটা শেষ হবে। একাজ তখন ছেড়ে দেবে লিপি।

লিপির কাজ হল, নেট চ্যাটিং-এর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট ধরা। এটাই এখন লিপির একমাত্র পেশা। ঋদ্ধি তার বড় মাপের খরিদ্দার হতে যাচ্ছে। লিপি সেভাবেই জাল পেতেছে। একাকিত্বের সুযোগটা সে নেবেই। মাঝিহীন নৌকার মত তার জীবনেও হাল ধরার কেউ নেই। তাই ঋদ্ধিকে তার চাই-ই চাই। কিন্তু কোন রেসপন্স নেই কেন? চিন্তার ভাজ পড়ে কপালে। ‘সাইন আউট’ তো করে নি! তবে? উত্তর দিচ্ছে না কেন? আজই একটা ডেট পাবার কথা, অন্ততঃ তেমন আশাই করেছিল লিপি। অস্থির হয়ে ওঠে সে। ঠিক তখনই হাতের মুঠোয় কেঁপে ওঠে থ্রি জি মোবাইল। ডিস্প্লে-স্ক্রিনে চোখ রাখতেই উজ্জ্বল হয় চোখ দুটো। ঋদ্ধি কলিং......। কানে নিয়ে রিসিভ বাটন প্রেস করতেই ভরাট গলায় কানটা ভরে ওঠে।

ষষ্ঠ পাতা

মন্তব্যসমূহ

রচনাকাল অনুযায়ী গল্প : পড়ুন 👉 এখানে ক্লিক করে

আলী হোসেনের জনপ্রিয় গল্পগুলো পড়ুন

নূরের জ্যোতি

কেমনে রাখবো কুল / পটল গাছে হয়না পটল /  না ছোঁয়ালে ফুল -- সুর করে  গান গাই গল্পটির ইউনিকোড ফন্টে খুব শিঘ্রি প্রকাশিত হবে। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। Saturday, March 07, 2009 11:20:42 AM Ali Hossain H/O : Asraf Ali Nasker Brahmapur, Battala Bazar ( Near Post Office ) Kolkata-7000 96 Phone: 9432983876

মড়ক - আলী হোসেন

মড়ক আলী হোসেন      কোনটা সময় আর কোনটা অসময়, সময়টা চলে না গেলে যেন বোঝা যায় না। বলা ভালো, ঠিকঠাক বোঝা যায় না। বিজ্ঞজনেরা তো তা-ই বলে। রতন বিজ্ঞজনও নয়, সময়ের গলিঘোঁজ খুঁজে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও তার কম্ম নয়। তবে তার সময় যে ভালো যাচ্ছে না, সে বিলক্ষণ জানে। জানে বলেই বোধ হয় বিষন্ন হয় মন, কখনও সখনও ভারিও। বিশেষ করে বাড়ির উল্টোদিকের ফুটে আকাশ ছোঁয়া মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানির বিল্ডিংটা দেখলেই তার বুকের ভেতরটা যেন চিনচিন করে ওঠে।      কিন্তু মন খারাপ করে যে কোন লাভ নেই। বাবা পরেশ পাড়ুই বলতেন, ‘কপালের লিখন বল বা ভাগ্যের চাকা – কোনটারই নিয়ন্ত্রন আমাদের হাতে নেই’। রতনেরও তাই মনে হয়। না হলে কি আর ওকে মোটর মেকানিক হয়ে জীবন কাটাতে হয়? সারাদিন গ্যারেজে কাজ, তারপর কালিঝুলি মেখে ভূত হয়ে বাড়ি ফেরা। কবে কবে যেন গায়ের রংটাই গেল পালটে। মা বলে, বাবার মতই গায়ের রঙ ছিল ওর। পড়াশুনায়ও দারুণ। বাবার ইচ্ছা ছিল, ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে; রতনও তাই ভাবতো। কিন্তু ভাবলেই কি আর সব হয়? কপালই তো ডাঁড়াশের ইঁদুর গেলার মত মোড়া মেরে ভরে দিল গ্যারেজে। তাই ডাক্তার হয়ার স্বপ্ন, ভাঙলো মোটর মেকানিক হয়ে।      রতনের জীবনে সেই শুরু অসময়ের

জলপট্টি

আলী হোসেনের ছোটগল্প - জলপট্টি সেদিনের কথাগুলো ভাবতে বসলে মায়ার চোখ দুটো ভিজে যায়। সবে সুখের মুখ দেখেছে ওরা। প্রচণ্ড দুর্দিনেও যারা মাটির টানকে উপেক্ষা করতে পারে নি, অসময়টা যখন কাটতে চলেছে, ঠিক তখনই শিকড়টা গেল কেটে। যেন প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস থেমে যাওয়ার মুখেই  লাটাই থেকে সুতটা ছিড়ে গেল। সুত-কাটা ঘুড়ির মত পাক খেতে খেতে দশ-পুরুষের ভিটে ছেড়ে এসে পড়ল কলকাতায়; কংক্রিটের জঙ্গলে। যারা ভরসা দিল, ‘পথের শেষ কোথায়’ দেখাবে, তারা কেমন সরে গেল সেই পথেই কাটা রেখে। পরেশের কথায়, ‘না রিফিউজি হলাম, না পেলাম নিজের জমি-জিরেত বিকিয়ে কেনা জমির দখল’। তাই চোখের কোন থেকে জলের ক্ষরণ কমে গেলেও বুকের ভেতরের গভীর ক্ষত এখনও শুকোয়নি মায়ার। তবে এ ক্ষতে সুস্থতার প্রলেপ পড়েছিল একবার। নয় নয় করে সেও বছর পনের আগের কথা। পরেশ তখন ফুটপাতের সব্জিওয়ালা, রতন ক্লাস ফোর-এ। ‘একখান কথা কইবো’? পরেশ চোখ তোলে। চোখে চোখ রেখে ঘাড় নাড়ে; তার মানে, ‘বলুন’। ‘আপনে কি নতুন বাংলাদেশ থিকা আইছেন’? পরেশ এবারও ঘাড় নাড়ে, মানে, ‘হ্যাঁ’। তোমার লগে কতা কইয়া, চাল-চলন দেইখ্যা তো লেহাপড়া জানা মনে অইতাছে। আজ্ঞে, ইন্টারমিডিয়েট পাস। চাকরি কোরবা? পরেশ মাথ