সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খোঁজ : তৃতীয় পাতা

গল্প : খোঁজ - আলী হোসেন। তৃতীয় পাতা

( গল্প সংকলন : দ্বিতীয় পিতা )

শুরু থেকে পড়ুন

আগের পাতা                  গল্প সংকলন                 চতুর্থ পাতা

সে কি খুব সুন্দরী ছিল? বন্ধুদের কেউই তা স্বীকার করে নি। ঋদ্ধিও জোর করে দাবি করে নি কোনদিন। নিদাগ দাঁতের ঈষৎ বড় চেহারা ঋষিতার মুখের অবয়বকে অপার্থিব করে তুলেছিল। অন্তত ওর তো তা-ই মনে হত।

এখন মনে হয় না? মাঝে মাঝেই প্রশ্নটার সামনা সামনি হয় ঋদ্ধিনাথ।

হয় না কি বলেছি? এমন করে উচ্চারন করে ঋদ্ধি, ঋষিতা বুঝে উঠতে পারে না এর অর্থ। একবার ভাবে, এর মানে হল ‘হয়ই তো’। অন্যভাবে ভাবলে মানে হয়, ‘হয় না তো। কিন্তু বলেছি কখনও? কিম্বা কষ্ট দিয়েছি তোমাকে, এ নিয়ে?’

এমন মনে হলেই বুকটা ভারি হয়ে ওঠে ঋষিতার। নিশ্বাসের চলাচলটা যেন আটকে যায়। ঋদ্ধি জানে, এমন মুহূর্তেই বিতর্কটা ইনহেলার হয়ে ওঠে। নতুন করে ডালপালা গজায় সম্পর্কের। সম্পর্কের এই ডালপালাই একে অপরকে কাছাকাছি আনে, জন্ম নেয় নতুন কোন সম্পর্ক। ঈষিতা, ওদের মেয়ে, এমনই এক সম্পর্কের ফসল। বাধনও।

তুমি একটু সহজ করে কথা বলতে পার না?

পারি তো।

বল না যে?

বলব কেন? পালটা প্রশ্ন করে ঋদ্ধি।

জীবনটা বেশ সহজ হয়ে যেত।

ওই জন্যেই তো বলি না। জীবনটা সহজ হয়ে গেলেই আসে একঘেয়েমি। সম্পর্কের গেরো যায় আলগা হয়ে।

অর্থাৎ তোমার মতে, সম্পর্কের টানাপোড়েনই সম্পর্ককে টেনে নিয়ে যায়?

ঠিক তাই।

আর এই ঠিকঠাক বুঝতে পারাটাই দ্বিতীয়বার অদ্বিতীয় করে তুলেছে ঋষিতাকে। যুক্তিবোধকে কখনই জীবন থেকে বিযুক্ত করে না ও। বিতর্কের সঙ্গে ঝগড়ার মৌলিক পার্থক্য কোথায়? ঋদ্ধিনাথ বলে, বেশ বোঝে ও। তাই ঝগড়া শব্দটা ওদের জীবন থেকে বাদ। ঝগড়া নেই মানে ঋষিতা। ঝগড়া আছে মানে নিশ্চয়ই অন্য কেউ। এভাবেই জীবনের ধারাপাতকে সূত্রায়িত করেছিল ঋদ্ধি। এভাবেই লিখেছিল স্মৃতিতে। একবারও ভাবে নি, ঝগড়া নেই মানে ঋষিতা নেই, এও হতে পারে।

ভাবে নি, মানে ভাবতে হয় নি। বন্ধুরা, বিশেষ করে মনোজ, প্রায়ই বলত, পারিস কী করে তোরা? আমরা তো হাঁপিয়ে উঠেছি। একই কাঠামো দেখতে দেখতে ঘেন্না ধরে গেছে। ঐ যে, কথায় বলে না ‘ থোড় বড়ি খাড়া,  খাড়া বড়ি থোড়’। কার ভালো লাগে বলতো? মাঝে মাঝে তো মনে হয়, সালা ডিভোর্স হয়ে যাবে। একটু দম নিয়ে বলে, বাই দ্যা বাই, তোরা আছিস কি করে বলতো? রসায়নটা কী?

রসায়ন জানলেই কি হবে ভাই? প্রয়োগটাই আসল। শিখতে গেলে শিষ্যত্ব নিতে হবে। ঋষিতার।

মজা করছিস? মনে মনে বলে, শালা সারা জীবন স্ত্রৈণই রয়ে গেল!

মোটেই মজা নয়। একদিন চলে আয়। শিখিয়ে দেব। মুখে অস্বীকার করলেও এটা মজা ছাড়া কিছুই না। তা মনোজও জানে, জানে ঋদ্ধিও। আসলে কেউ কাউকে কিছু শেখাতে পারে না। শেখানো আর শিখতে চাওয়ার ইচ্ছার অনুপাত যদি সমানুপাতিক হয়, তবেই সমাধান সূত্র বের হয়। বিতর্কে হেরে গিয়েও যে জেতা যায়, এ ধারণা তো ঋষিতাই শিখিয়েছে। কিন্তু নিজের সদিচ্ছাকে মাইনাস কর, ইকুয়াল্টু জিরো। আসলে দুজনেই চেয়েছে সম্পর্কটাকে ধরে রাখতে। তাই রসায়নটার জন্ম। এ রসায়নের একক কোন সূত্র হয় না, হয় না সর্বজনীন প্রয়োগও।

চতুর্থ পাতা

মন্তব্যসমূহ

রচনাকাল অনুযায়ী গল্প : পড়ুন 👉 এখানে ক্লিক করে

আলী হোসেনের জনপ্রিয় গল্পগুলো পড়ুন

নূরের জ্যোতি

কেমনে রাখবো কুল / পটল গাছে হয়না পটল /  না ছোঁয়ালে ফুল -- সুর করে  গান গাই গল্পটির ইউনিকোড ফন্টে খুব শিঘ্রি প্রকাশিত হবে। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। Saturday, March 07, 2009 11:20:42 AM Ali Hossain H/O : Asraf Ali Nasker Brahmapur, Battala Bazar ( Near Post Office ) Kolkata-7000 96 Phone: 9432983876

মড়ক - আলী হোসেন

মড়ক আলী হোসেন      কোনটা সময় আর কোনটা অসময়, সময়টা চলে না গেলে যেন বোঝা যায় না। বলা ভালো, ঠিকঠাক বোঝা যায় না। বিজ্ঞজনেরা তো তা-ই বলে। রতন বিজ্ঞজনও নয়, সময়ের গলিঘোঁজ খুঁজে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও তার কম্ম নয়। তবে তার সময় যে ভালো যাচ্ছে না, সে বিলক্ষণ জানে। জানে বলেই বোধ হয় বিষন্ন হয় মন, কখনও সখনও ভারিও। বিশেষ করে বাড়ির উল্টোদিকের ফুটে আকাশ ছোঁয়া মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানির বিল্ডিংটা দেখলেই তার বুকের ভেতরটা যেন চিনচিন করে ওঠে।      কিন্তু মন খারাপ করে যে কোন লাভ নেই। বাবা পরেশ পাড়ুই বলতেন, ‘কপালের লিখন বল বা ভাগ্যের চাকা – কোনটারই নিয়ন্ত্রন আমাদের হাতে নেই’। রতনেরও তাই মনে হয়। না হলে কি আর ওকে মোটর মেকানিক হয়ে জীবন কাটাতে হয়? সারাদিন গ্যারেজে কাজ, তারপর কালিঝুলি মেখে ভূত হয়ে বাড়ি ফেরা। কবে কবে যেন গায়ের রংটাই গেল পালটে। মা বলে, বাবার মতই গায়ের রঙ ছিল ওর। পড়াশুনায়ও দারুণ। বাবার ইচ্ছা ছিল, ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে; রতনও তাই ভাবতো। কিন্তু ভাবলেই কি আর সব হয়? কপালই তো ডাঁড়াশের ইঁদুর গেলার মত মোড়া মেরে ভরে দিল গ্যারেজে। তাই ডাক্তার হয়ার স্বপ্ন, ভাঙলো মোটর মেকানিক হয়ে।      রতনের জীবনে সেই শুরু অসময়ের

জলপট্টি

আলী হোসেনের ছোটগল্প - জলপট্টি সেদিনের কথাগুলো ভাবতে বসলে মায়ার চোখ দুটো ভিজে যায়। সবে সুখের মুখ দেখেছে ওরা। প্রচণ্ড দুর্দিনেও যারা মাটির টানকে উপেক্ষা করতে পারে নি, অসময়টা যখন কাটতে চলেছে, ঠিক তখনই শিকড়টা গেল কেটে। যেন প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস থেমে যাওয়ার মুখেই  লাটাই থেকে সুতটা ছিড়ে গেল। সুত-কাটা ঘুড়ির মত পাক খেতে খেতে দশ-পুরুষের ভিটে ছেড়ে এসে পড়ল কলকাতায়; কংক্রিটের জঙ্গলে। যারা ভরসা দিল, ‘পথের শেষ কোথায়’ দেখাবে, তারা কেমন সরে গেল সেই পথেই কাটা রেখে। পরেশের কথায়, ‘না রিফিউজি হলাম, না পেলাম নিজের জমি-জিরেত বিকিয়ে কেনা জমির দখল’। তাই চোখের কোন থেকে জলের ক্ষরণ কমে গেলেও বুকের ভেতরের গভীর ক্ষত এখনও শুকোয়নি মায়ার। তবে এ ক্ষতে সুস্থতার প্রলেপ পড়েছিল একবার। নয় নয় করে সেও বছর পনের আগের কথা। পরেশ তখন ফুটপাতের সব্জিওয়ালা, রতন ক্লাস ফোর-এ। ‘একখান কথা কইবো’? পরেশ চোখ তোলে। চোখে চোখ রেখে ঘাড় নাড়ে; তার মানে, ‘বলুন’। ‘আপনে কি নতুন বাংলাদেশ থিকা আইছেন’? পরেশ এবারও ঘাড় নাড়ে, মানে, ‘হ্যাঁ’। তোমার লগে কতা কইয়া, চাল-চলন দেইখ্যা তো লেহাপড়া জানা মনে অইতাছে। আজ্ঞে, ইন্টারমিডিয়েট পাস। চাকরি কোরবা? পরেশ মাথ