সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মড়ক - আলী হোসেন

মড়ক

আলী হোসেন

    কোনটা সময় আর কোনটা অসময়, সময়টা চলে না গেলে যেন বোঝা যায় না। বলা ভালো, ঠিকঠাক বোঝা যায় না। বিজ্ঞজনেরা তো তা-ই বলে। রতন বিজ্ঞজনও নয়, সময়ের গলিঘোঁজ খুঁজে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও তার কম্ম নয়। তবে তার সময় যে ভালো যাচ্ছে না, সে বিলক্ষণ জানে। জানে বলেই বোধ হয় বিষন্ন হয় মন, কখনও সখনও ভারিও। বিশেষ করে বাড়ির উল্টোদিকের ফুটে আকাশ ছোঁয়া মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানির বিল্ডিংটা দেখলেই তার বুকের ভেতরটা যেন চিনচিন করে ওঠে।

    কিন্তু মন খারাপ করে যে কোন লাভ নেই। বাবা পরেশ পাড়ুই বলতেন, ‘কপালের লিখন বল বা ভাগ্যের চাকা – কোনটারই নিয়ন্ত্রন আমাদের হাতে নেই’। রতনেরও তাই মনে হয়। না হলে কি আর ওকে মোটর মেকানিক হয়ে জীবন কাটাতে হয়? সারাদিন গ্যারেজে কাজ, তারপর কালিঝুলি মেখে ভূত হয়ে বাড়ি ফেরা। কবে কবে যেন গায়ের রংটাই গেল পালটে। মা বলে, বাবার মতই গায়ের রঙ ছিল ওর। পড়াশুনায়ও দারুণ। বাবার ইচ্ছা ছিল, ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে; রতনও তাই ভাবতো। কিন্তু ভাবলেই কি আর সব হয়? কপালই তো ডাঁড়াশের ইঁদুর গেলার মত মোড়া মেরে ভরে দিল গ্যারেজে। তাই ডাক্তার হয়ার স্বপ্ন, ভাঙলো মোটর মেকানিক হয়ে।

    রতনের জীবনে সেই শুরু অসময়ের। তারপর থেকে এই ‘অ’ যেন আর পেছন ছাড়েনি। রতনের মনে আছে, ফোর পাশ করতেই প্রাইমারী স্কুলটা উঠে গেল। চালা ঘরটা অবশ্য এখনও আছে। চারিদিকে বড় বড় ফ্লাট বাড়ি, নয় তো মাল্টি-স্টোরেজ বিল্ডিং। কঙ্কালসার দেহ আর মরচে পড়া সাইনবোর্ডটা গলায় ঝুলিয়ে উঁকি দিচ্ছে। ঝোপ-জঙ্গলে ভরা একচিলতে জমিতে কোনক্রমে মুখ লুকিয়ে বেঁচে আছে, রতনের কালিঝুলি মেখে বাঁচার মত। আসলে এভাবেই বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়েছে রতন। ‘হঠাৎ-ই বাবাকে হারিয়ে ফেললাম তো! রতনের স্বগতোক্তি।

    তবু হাল ছাড়ে নি সে। রতনের মা-ও দাঁতে দাঁত চেপে পথে নেমেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। ক্লাস সেভেনে উঠতেই হাইস্কুলটাও উঠে গেল।
    পঞ্চাশ-ষাট জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে তো আর স্কুল চলতে পারে না!
    কিন্তু আমার কী হবে? টুকাই, মাম্পি, রুকসানাদের কী হবে? মহূর্তেই প্রশ্নগুলো মাথার চিন্তক কোষকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল রতনের!
    কী হবে আবার, অন্য স্কুলে ভর্তি হবে! স্কুল ডিপার্টমেন্টের আধিকারিক সোজাসুজি উত্তর দিলেন। কাছাকাছি স্কুল চুজ করুন, আমরাই ভর্তির ব্যাবস্থা করে দেব। চোখ ঘুরিয়ে অবিভাবকদের আশ্বাস দেন।
    রতন চিন্তায় পড়ে যায়। তৃণা বলে, তুই আমাদের স্কুলে চলে আয়।

    তৃণা, রতনের বন্ধু। একই পাড়ায় থাকে। ওর বাবা আগে ছোট মুদি-দোকান চালাত। এখন ইট-বালি-সিমেন্টের দোকান দিয়েছে। দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে তো, ব্যাবসাটা বেশ ফুলেফেঁপে উঠেছে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তৃণা। ভালো স্কুলে পড়ানোর ইচ্ছাটাও তাই ইদানিং চাগিয়ে উঠেছে। তাই রতনদের স্কুল আর তৃণার নয়; ও এখন ‘সেন্ট পলস মাল্টিপারপাস স্কুল’-এর ছাত্রী হতে যাচ্ছে। দেখাদেখি জুই, স্নেহা আরও সব বন্ধুরা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রতনও এডমিশন টেষ্ট দিয়েছিল; তৃণার জোরাজুরিতেই। ভালো রেজাল্টও করেছিল। কিন্তু ভর্তির টাকাটা আর জোগাড় হয় নি। তৃণার বাবা অবশ্য টাকাটা দিতে চেয়েছিলেন। তৃণা বলেছিল, ‘রতন আমার ভালো বন্ধু। ও না যেতে পারলে, আমিও যাব না।‘
    এ আবার কেমন কথা?
    তৃণা বরাবরই কম কথা বলে। বললাম তো, ও আমার ভালো বন্ধু।
    এক রকম বাধ্য হয়েই টাকা দেওয়ার প্রস্তাব। কিন্তু রতন নেয় নি। হঠাৎ করে যে স্কুলটা বন্ধ হয়ে যাবে, ও একদমই আন্দাজ করতে পারেনি।
    পারলেই বা কী করতিস? ওই স্কুলের মাসে মাইনে কত জানিস? রেহান প্রশ্ন করে। প্রশ্নের ধরন এমন, যেন রতন বামন হয়ে চাঁদ ধরতে চাইছে। রতন নিজের অবস্থানকে গ্রহনযোগ্য করার চেষ্টা করে। যুক্তি দেখায়, শুধু মাসের মাইনে বেশি হলেই কি স্কুল ভালো হয়? ভালো পড়াশুনা হওয়ার সঙ্গে মাস-মাইনের আদৌ কোন সম্পর্ক আছে কি?

    যদিও কেন নেই, কিভাবে নেই, তার কোন জুতসই ব্যাখ্যা তার কাছে ছিল না। দিতেও পারে নি। শুধু বলেছিল, স্কুলটা যদি চালু থাকে, এখানেই আমি ভালো রেজাল্ট করব, দেখে নিস। দেখিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা পুরন হয় নি রতনের, আশাও আলোর মুখ দেখেনি কোন দিন। সে এখনও বিশ্বাস করে, স্কুলটা বন্ধ না হয়ে গেলে, তার পড়াশুনাটা বন্ধ হত না। আন্যান্য বন্ধুদেরও কিছুটা লেখাপড়া হত হয়তো!

    রতনের এই ভাবনার সঙ্গে পুরোপুরি একমত বিকাশবাবু। এপাড়ার ডাকসাইটে নেতা। সবাই মাস্টারদা নামেই ডাকেন। স্কুল থেকে ফেরার পথে টু-হুইলার সার্ভিসিং-এর জন্য এসেছেন। রতনের গ্যারেজে।
    তুমি ঠিকই বলেছ রতন।
    তাহলে স্কুলটা বন্ধ করে দিলেন কেন স্যার? রতনের গলায় অনুযোগের সুর। প্রশ্নটা করতে পেরে বেশ সাহসি-সাহসি মনে করছে নিজেকে।

    বিকাশবাবু রাশভারি মানুষ, তার ওপর লোকাল কমিটির নেতা। প্রতেকেই সমিহ করে চলে। যে-কেউ মাথা তুলে কথা বলার সাহস দেখায় না। কিন্তু রতন বলেছে। সত্যিই তো, মাথা তুলতে না পারাটা দুর্বলতা। আর দুর্বলতাই মানুষকে দাসে পরিনত করে। রতন মনেপ্রাণে দাসত্বকে ঘৃণা করে। মনে হয়, তাই সে পেরেছে।
    প্রশ্নের উত্তর বড় জটিল, বুঝবে তুমি?
    অন্য সময় হলে বিকাশবাবু কি উত্তর দিতেন? সন্দেহ আছে! অথচ আজ নিজেই দিতে চাইছেন। কেন? রতন ভাবে, সেও কি সময় কিম্বা অসময়ের গল্প?

    তুই বোঝালে নিশ্চয় বুঝবে? পাশ থেকে ধীমান গলা মেলায়। ধীমান তৃণার বাবা। গলায় চিরাচরিত শ্লেষ। মত ও পথের পার্থক্য থাকলেও দুজনের বন্ধুত্ব কিন্তু গলায়-গলায়। সুনামির প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাস যেমন সামুদ্রিক প্রাণীকে উপকূলে আছড়ে ফেললেও সমুদ্রের সঙ্গে তার বিচ্ছেদের কথা ভাবা যায় না, বিকাশ আর ধীমানের সম্পর্কও তেমন।
    রতন বুঝবে কিনা জানি না। কিন্তু তুই যে বুঝবি না, এটা নিশ্চিত।
    কেন?
    যে জেগে ঘুমায়, তার ঘুম ভাঙানো যেমন দুঃসাধ্য; তেমনি যে বুঝেও না বোঝার ভান করে, তাকে বোঝানও তাই।
    তুই কি অস্বীকার করবি, সরকারী স্কুল গুলোতে লেখাপড়ার মান নেমে যাওয়া, ইংরাজি তুলে দেওয়া......।
    জানি। বন্ধুকে থামিয়ে দেয় বিকাশ। পার্টির কোন সম্মেলন-মঞ্চ হলে ইংরাজির বিষয়টা এভাবে মেনে নিত না সে। কারণ, সে এখনও বিশ্বাস করে ইংরাজি তুলে দিয়ে সরকার ঠিকই করেছিল। গত সম্মেলনে সম্পাদকের জবাবি ভাষণে জোরের সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছিল, ওয়েলফেয়ার স্টেটের মূল লক্ষ্য কী? নিশ্চয়ই সমস্ত মানুষের মধ্যে ন্যূনতম নাগরিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। তাই যদি হয়, কোন বিদেশি ভাষার চাপে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’ ঘরের ছেলে-মেয়েরা প্রাইমারি স্তরেই স্কুলছুট হবে তা মোটেও কাম্য নয়। তাছাড়া, হাতে গোনা কিছু ইংরাজি জানা নাগরিক তৈরির চেয়ে রাষ্ট্রের কাছে জরুরি হল সমস্ত নাগরিকের ন্যূনতম নাগরিক শিক্ষা সুনিশ্চিত করা। কেননা, এমন একজন নাগরিক লেখাপড়া না জানা মানুষের চেয়ে তার সন্তানের লেখাপড়ার জন্য অনেক বেশী সচেষ্ট হন। আর তাতেই জাতির শ্রীবৃদ্ধি। কিন্তু আজ সেকথা তুলবে না বিকাশ। ধীমানের কথার সূত্র ধরে বলে, কিন্তু ওগুলোই সব নয়! এলাকায় উচ্চবিত্ত ও ননবেঙ্গলী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াও একটা কারন। সেই সঙ্গে নিম্মবিত্ত মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়।
    তাছাড়া, মুখটিপে হাসে ধীমান, নিজের সন্তানকে কি করে বস্তির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একই স্কুলে পড়াই! স্ট্যাটাস বলে তো একটা কথা আছে না! গলাটা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, তোদের ক্লাসটাই তো এখন পালটে গেছে, ঠিক কি না!
    ক্লাস পাল্টানোর জন্যই তো ক্লাস-স্ট্রাগল।
    সে কি কেবল পার্টির নেতাদের জন্যে?
    তার মানে, এত বছর ধরে শুধু নেতাদেরই ক্লাস পাল্টেছে? তাহলে তো তুইও একজন পার্টির নেতা! পচিশ বছর আগে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে হয়ে কলকাতায় এসেছিলি; মনে আছে নিশ্চয়? এখন ধীমান এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার। পঞ্চাশ লক্ষ টাকার রিটার্ন জমা পড়ছে ফি-বছর। সেও কি পার্টির কল্যানে?
    আমি মেহেনত করেছি।
    এমন মেহেনত আর উন্নতি কোন পার্টির লোক করলেই যত দোষ। রাজনীতি করি বলে কি আজীবন খাটো পাজামা আর কাঁধে আধ-ময়লা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে আধপেটা খেয়ে বেড়াতে হবে?

    কথার ফাঁকে বিকাশ রতনের চোখাচোখি হয়। হঠাৎ যেন খেই হারিয়ে ফেলে বিকাশ। ভাবে, রতন কি মনে মনে বলছে, তাই কি আপনার ছেলে সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়ে স্যার! কিম্বা, আপনাদের ছেলেমেয়েরা যদি এই স্কুলগুলোতে পড়তো, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের মত আপনারাও যদি দায়িত্ববান হতেন তবে কি আমাদের স্কুলটা উঠে যেত? বিকাশ জানে, সরকারি চাকরি না হারানোর গ্যারান্টি যেমন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চত করেছে, তেমনি কিছু মানুষকে আয়েসি এবং ফাঁকিবাজ করে তুলেছে। এ এক আদ্ভূত যন্ত্রনা!

    রতনের যন্ত্রনা একেবারেই আলাদা। বৌটা অন্তঃসত্ত্বা। ইদানিং নিজের পুরনো ব্যামোটা চাগিয়ে উঠেছে। যারে বলে ক্যুঁজোর চিত হয়ে শোয়ার ইচ্ছা! ছেলে হোক বা মেয়ে, লেখাপড়া তাকে শেখাবেই। কিন্তু কীভাবে? সেটাই তার যন্ত্রণা।

    কাছেপীঠে তো কোন সরকারী স্কুল নেই। কোথায় ভর্তি করাবে ছেলেকে? সেন্ট পলসে তো ডোনেশান ও এডমিশন ফি বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা দরকার। তারপর প্রতিমাসে এগার শো করে টিউশন ফি! নুন আনতে পান্তা ফুরায় যার, তার যে এমন স্বপ্ন দেখাও পাপ। একটা উপায় অবশ্য আছে। বসত-ভিটেটা সে বেচে দেবে। রতনের মাথায় বিষয়টা এসেছে অনেক দিন। কিন্তু বলার সাহস হয়নি। মা যদি বেঁকে বসে?

    সত্যি বলতে কি আরও দু-বছর আগে হলে বেঁকেই বসতো মায়া। কিন্তু আজ আর সে-মোহ নেই। আগরওয়ালের চিঠিই মায়ার চোখ খুলে দিয়েছে। এই জমিটুকু রক্ষা করতে গিয়ে পরেশ যে নিজের জীবনকেই অরক্ষিত করে ফেলেছিল, তা এখন জলের মত পরিষ্কার। এই জমিটার লোভেই যে আগরোয়াল উপেনের রাজা-বাবুর বেশ ধরেছিল :
শুধু বিঘে দুই ছিলো মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে
বাবু কহিলেন, বুঝেছো উপেন এ জমি লইবো কিনে’।
---------------------------------------
শুনি রাজা কহে, ‘বাপু , জানো তো হে, করেছি বাগানখানা
পেলে দুই বিঘে প্রস্থ ও দিঘে সমান হইবে টানা...।
    জমির মায়া তাই মায়া ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। যদিও মায়ার এই সিদ্ধান্ত মনের বিরুদ্ধে গিয়েই নিতে হয়েছে। জীবনের শেষ পর্বে এসে মনের বিরুদ্ধে মনকে চালনা করতে মেটেও সায় দিচ্ছিল না মায়ার।
    রতনের মনও সায় দিচ্ছে না। জীবনের কুঁড়ি ফোঁটা থেকেই সে এখানে। আশপাশের গলিঘোঁজের ধুলো-ময়লার মধ্যেই তার শৈশব আর কৈশোরের বেড়ে ওঠার টালমাটাল সময়গুলো জেগে রয়েছে এখনও। চোখ বন্ধ করলেই এখনও দেখতে পায় সেইসব মন খারাপ করা সকাল-দুপুর-বিকালগুলোর ছটফটানি। রাতের আঁধারে চোখের পাতাদুটো কাছাকাছি এলেই ফেড-আউটে ফুটে ওঠে স্কুলের কড়িবর্গা, প্লাস্টার খসা দেওয়ালগুলোর মনমরা অবয়ব। যেদিন সান্তারাজ এসে দেওয়ালগুলোর বুকে শাবল-গাইতির ঘা মারা শুরু করেছিল, রতনের বুকটাই যেন ফালাফালা হয়ে ভেঙে পড়ছিল মনের মাটিতে। জীবনের স্বপ্নগুলো ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ছিল একএক ঘায়। তাই মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানীর বিল্ডিংটাকে দেখলেই সমস্ত শরীর চিনচিন করে ওঠে রতনের। এই রঙচঙে ঝাঁ-চকচকে বিল্ডিংটার নিচেই তো সমাধিস্ত হয়েছে তার সোনালী দিনের স্বপ্নগুলো।

    দিলদার কাকুর মত বাবাও বলতেন, যখন মন খারাপ হবে, খুজে পাবি না সঠিক পথ, তখন আকাশের তারা গুনবি। দেখবি উত্তর বা দক্ষিণের ওওই, ওওওই যে উজ্জ্বল তারা দুটো, ওরাই বলে দেবে তোর আসল ঠিকানা। ওরাই তো জীবনের ধ্রুবতারা।

    রাতের আকাশের তারা গোনার আভ্যাস আর নেই রতনের। বাবার কথাটা মনে পড়তেই স্মৃতিগুলো চাঙ্গা হয়ে ওঠে। বাইরে বেরিয়ে পড়ে। মেঘমুক্ত আকাশের কোথাও তো চেনা তারা দুটো নেই। তারাও কি বাবার আর দিলদার কাকুর সাথে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল! হাতড়ে বেড়ায় রতন। ঐ তো, সোনারপুরের আকাশ। একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে জ্বলজ্বল করছে মেরু নক্ষত্র। তার মধ্যেই রতন দেখতে পায় তার বাবাকে। সে যেন বলছে, বাবা রতন এই তোর আসল ঠিকানা। চলে আয়, এখানেই রুয়ে দে তোর স্বপ্নগুলো।
    রতন ঘরে ঢোকে। দিলদার কাকুর রেখে যাওয়া চৌকিতে গা এলিয়ে দেয়। অপলক চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর পোয়াতি বৌএর ভরা পেটে কান পাতে, ‘স্বপ্নের সওদাগর আমার। আমি পারি নি। তুই পারবি তো’?
    রতন যেন শুনতে পায়, পারবো বাবা। সোনারপুরে তো এখনও মড়ক লাগেনি। ওখানকার কোন স্কুল থেকেই.........স্বপ্ন পুরনের পাঠ নেব।

-------*****-------


৩০শে নভেম্বর ২০১০
১২ টা. ০৪ (এ.এম)
প্রকাশিত : ভাশাবন্ধন পত্রিকা, সম্পাদক নবারুণ ভট্টাচার্য।
প্রকাশ : পূজা সংখ্যা - ২০১২

মন্তব্যসমূহ

রচনাকাল অনুযায়ী গল্প : পড়ুন 👉 এখানে ক্লিক করে

আলী হোসেনের জনপ্রিয় গল্পগুলো পড়ুন

নূরের জ্যোতি

কেমনে রাখবো কুল / পটল গাছে হয়না পটল /  না ছোঁয়ালে ফুল -- সুর করে  গান গাই গল্পটির ইউনিকোড ফন্টে খুব শিঘ্রি প্রকাশিত হবে। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। Saturday, March 07, 2009 11:20:42 AM Ali Hossain H/O : Asraf Ali Nasker Brahmapur, Battala Bazar ( Near Post Office ) Kolkata-7000 96 Phone: 9432983876

জলপট্টি

আলী হোসেনের ছোটগল্প - জলপট্টি সেদিনের কথাগুলো ভাবতে বসলে মায়ার চোখ দুটো ভিজে যায়। সবে সুখের মুখ দেখেছে ওরা। প্রচণ্ড দুর্দিনেও যারা মাটির টানকে উপেক্ষা করতে পারে নি, অসময়টা যখন কাটতে চলেছে, ঠিক তখনই শিকড়টা গেল কেটে। যেন প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস থেমে যাওয়ার মুখেই  লাটাই থেকে সুতটা ছিড়ে গেল। সুত-কাটা ঘুড়ির মত পাক খেতে খেতে দশ-পুরুষের ভিটে ছেড়ে এসে পড়ল কলকাতায়; কংক্রিটের জঙ্গলে। যারা ভরসা দিল, ‘পথের শেষ কোথায়’ দেখাবে, তারা কেমন সরে গেল সেই পথেই কাটা রেখে। পরেশের কথায়, ‘না রিফিউজি হলাম, না পেলাম নিজের জমি-জিরেত বিকিয়ে কেনা জমির দখল’। তাই চোখের কোন থেকে জলের ক্ষরণ কমে গেলেও বুকের ভেতরের গভীর ক্ষত এখনও শুকোয়নি মায়ার। তবে এ ক্ষতে সুস্থতার প্রলেপ পড়েছিল একবার। নয় নয় করে সেও বছর পনের আগের কথা। পরেশ তখন ফুটপাতের সব্জিওয়ালা, রতন ক্লাস ফোর-এ। ‘একখান কথা কইবো’? পরেশ চোখ তোলে। চোখে চোখ রেখে ঘাড় নাড়ে; তার মানে, ‘বলুন’। ‘আপনে কি নতুন বাংলাদেশ থিকা আইছেন’? পরেশ এবারও ঘাড় নাড়ে, মানে, ‘হ্যাঁ’। তোমার লগে কতা কইয়া, চাল-চলন দেইখ্যা তো লেহাপড়া জানা মনে অইতাছে। আজ্ঞে, ইন্টারমিডিয়েট পাস। চাকরি কোরবা? পরেশ মাথ