গল্প : খোঁজ - আলী হোসেন। চতুর্থ পাতা
( গল্প সংকলন : দ্বিতীয় পিতা )
শুরু থেকে পড়ুন
ঋষিতা আজ নেই। সশরীরে। কিন্তু সে তার জীবন থেকে একেবারে বিচ্ছন্ন হয়ে যায় নি। হয় নি, তা আরও একবার প্রমান হয়ে গেল। আজ। আজও সে হেরে গিয়ে জিতে এসেছে। সে চাইলেই বিট্টুকে সপাটে একটা ঘুষি চালিয়ে দিতে পারতো। নিদেনপক্ষে একটা চড়ও। সে সামর্থও তার আছে। কিন্তু তারপর? বিট্টুরা কিভাবে রিয়্যাক্ট করত! এখন ভাবতেই শিউরে ওঠে শরীর।
মধ্য-পঞ্চাশের ঋদ্ধিনাথ। পাঁচ বছর হল ঋষিতাও গত হয়েছে। ঈশিতা তো থেকেও নেই। তাই কোন পিছুটান তো তার ছিল না। তবু পারে নি। আর এতেই কি প্রমান হল না ঝগড়া নেই মানে ঋষিতা নেই, এও সম্ভব।
ঋষিতার মূল্যায়ন এভাবেই করে এখন। ভাবে, জীবনের ধর্মও জলের মত। যে পাত্রে যায়, তার আকার ধরে। সময়-পাত্রে এক সময় সবই সয়ে যায়। ঈশিতাকে হারিয়ে যে শুন্যতা, তাও এক সময় সয়ে গিয়েছিল। ভরে দিয়েছিল ঋষিতাই। কিন্তু বাইপাসের ধারে হাজার স্কোয়ার ফুটের ফ্লাটের নির্জনতা যেন কিছুতেই ভরাট হওয়ার নয়। নির্জনতা ক্রমেই শূন্যতায় রুপান্তরিত হচ্ছে। সেই শূন্যতাই আজকাল গিলতে আসছে ওকে। হাঙরের মত।
চাকরী জীবনের শেষ দশকের সুচনাতেই এই শূন্যতার শুরু। ঋদ্ধিনাথ মনে করে এটাই তার জীবনের দ্বিতীয় দুর্ঘটনা। ব্যাথা কমানোর অসুধের ভুল ডোজে জীবন-ঘড়ির কাটা হঠাৎই গতি হারায়। ঋষিতা প্রায়ই বলত, তোমার আগেই হয়তো আমি চলে যাব, দেখো। মেয়েটা যদি থাকত, একটু নিশ্চিন্তে মরতে পারতুম।
আজ খুবই মনে পড়ছে কথাটা। কিভাবে বুঝেছিল ও! একাকিত্বের এমন যন্ত্রনার পূর্বাভাস? চৈতন্যের কোন রেডারে ধরা পড়েছিল এই পশ্চিমী-ঝঞ্ঝা? প্রশ্নগুলোর ভর যেন অনেকটাই বেড়ে গেছে ইদানিং। কার সাথে শেয়ার করবে আজকের যন্ত্রনা? এসব রাশিরাশি প্রশ্নের প্লাবন ঠেলে মাথা তুলছে বিশেষ একটা প্রশ্ন, মেয়েটা যদি থাকত, আজকের ঘটনা কি আদৌ ঘটত?
কি জানি, হয় তো ঘটত না। কিম্বা ঘটতো। ইদানিং একটা মেয়ের সাথে ভারি ভাব হয়েছে ঋদ্ধির। ওর সঙ্গেই চ্যাটিং-এ ব্যস্ত ছিল এতক্ষণ। মেয়েটিও ঋদ্ধির মত একা। বয়স মোটামুটি বাইশ থেকে পঁচিশের মধ্যে। ছিপছিপে চেহারা। গায়ের রং দুধে-আলতা। টিকালো নাক, নাকের বাঁম লতিতে ছোট্ট একদানা তিল। তিলটা দেখলেই ঈশিতার কথা মনে পড়ে যায়। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হত। ঈশিতাকে হারানোর যন্ত্রনাকে উস্কে দিত তিলটা। তবে এখন আর হয় না। চুটিয়ে গল্প করে দু’জনে। কখনও গুরু-গম্ভির আলোচনায় মেতে ওঠে। নিখাদ বন্ধুর মত। এই বন্ধুত্বই ওদের সম্পর্কের গিট হয়ে উঠেছে। ঋদ্ধির চ্যাটার লিস্টে যে কজন মেয়ের নাম আছে, সবার সাথেই ওর দারুণ ভাব। তবে লিপি একটু অন্য রকম। কেন অন্য রকম, তার ইতিবৃত্ত জানার চেষ্টা করছে ঋদ্ধিনাথ। সবই পরিচয় গোপন করে।
ইন্টারনেটে পরিচয় গোপন রাখাটা নতুন কিছু নয়। যারা একাউন্ট খোলে, বিশেষ করে চ্যাটিং-এর জন্যে, সবাই নিক নেম ব্যবহার করে। ঋদ্ধিনাথ বসু তাই ঋদ্ধি৩৬৫। লিপির আড়ালে কে আছে, কে জানে!
lipi123: hi
riddhi365: fine
lipi123: i am from shiliguri, tell me about you
riddhi365: i am fm kolkata
lipi123: তুমি বাঙালী?
চ্যাট বক্সে হঠাৎ বাংলা শব্দ ফুটে ওঠায় অবাক হয় ঋদ্ধিনাথ। রিপ্লাইতে লেখে
riddhi365: yes, but......
lipi123: চ্যাট বক্সে বাংলা কি করে এল?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন