সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খোঁজ : দ্বিতীয় পাতা

গল্প : খোঁজ - আলী হোসেন। দ্বিতীয় পাতা

( গল্প সংকলন : দ্বিতীয় পিতা )

শুরু থেকে পড়ুন

আগের পাতা                  গল্প সংকলন                 তৃতীয় পাতা

বিট্টু হুড়মুড়িয়ে চেয়ারের দখল নেয় । এত সময় ওর চেয়ার ছিল না। বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়েই চ্যাটের মজা লুঠছিল। লুঠছিল না ছাই, মনে মনে ভাবে, শেয়ার করছিলাম। লম্বা প্রশ্বাস নিয়ে ভাবনাকে টেনে নিয়ে যায়, চ্যাটিং-এও আবার শেয়ার! ভাবা যায়? মোটেই পোষাচ্ছিল না। লুঠের জন্যই তো আসা। নিশার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ন ডিস্কাসশন রয়েছ। ট্রেকিং নিয়ে। আরও কনফিডেনশিয়াল ডিসিশন নেওয়ার কথা আজ। নিশার শরীরের গোপন পাত্রে রাখা মহুয়ার স্বাদ পাবে সে। তাও এই প্রথম। ভাবতেই শরীরে শিহরণ ওঠে। এক অবর্ননীয় আবেশে চোখদুটো বুজে যায়। গতরাতের ঘোরটাই তো এখনও কাটে নি। নিশার শরীরের কতটা গভীরে ঢুকতে পেরেছিল কে জানে? ঠিক মনে করতে পারে না। তলপেটের নিচে টনটনে ব্যাথাটা প্রচণ্ড ঝাকুনিতে ভালোলাগার চরমসীমা ছুঁতেই স্বপ্নের ঘোরটা কেটে গেল। একটা অদ্ভূত ভোট্কা গন্ধের বলয়ে ধনুক-বাঁকা শরীরটা আটকে গেল কিছুক্ষণ। একরাশ অস্বস্তি আর গন্ধটা তো এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ওকে। আধোঘুমের শরীরী মোচড়, লাভাস্রোতের মত রক্তের দুরন্ত নিম্নগতি, আর প্রচণ্ড ঝাকুনিতে, সে কতটা প্রবেশ করেছিল নিশার মহুলবনের গহিনে, তার প্রামান্যতা প্রাপ্তির লক্ষ্যে দেহ-মন যেন আনচান করছে সারাক্ষণ। তাই অস্থিরতা সর্বাঙ্গে।

প্রায় আধ ঘন্টারও বেশি হয়ে গেল, নিশা অনলাইনে। কতটা সবুর করা যায়! তাই মাথা খাটানো। যদিও শুরুটা বিট্টুর বন্ধুই করেছিল। নিজে সময়মত ট্রাকে ঢুকতেই কিস্তিমাত। সিটটা (চেয়ার) এখন তার।

এই দেখ দেখ, আঙ্কেলের ক্যালি আছে বলতে হয়! মেয়েগুলোর ফিগার দেখ। সব লাউ-ডগার মত স্লিম। কি করে পটালো বলতো?

তার আগে তুই বলতো, ওনার প্রফাইলে ঢুকলি কী করে?

সিম্পল। সান রাইজ হয়েছে, সান সেট তো হয় নি। সামনের কোল বরাবর মাথা নাচিয়ে বিট্টু বলে, টেনশনে আঙ্কেল সাইন-আউট করতেই ভুলে গেছে।

দেখ হয় তো... বিট্টুর বন্ধু কোন ব্যাখ্যা দিতে চাইছিল। বিট্টু থামিয়ে দেয়। ও-য়া-ও... করে লাফিয়ে ওঠে। যেন মধ্যাকর্ষন শক্তির মত কিছু আবিস্কার করে ফেলেছে, যার টানে রাজ্যের মেয়েরা ঋদ্ধির চ্যাট রুমে।

সালা চেহারাটা দেখ! বিট্টু ঋদ্ধিনাথের প্রফাইল-ফোটোয় ইশারা করে, যেন ঋষি কাপুর।

তাহলে বলছিস, আঙ্কেলের শুধু হাত আর মনের নয়, মাথার জোরও ঈর্ষা করার মত!

ঠিক তাই। ভেবে চিন্তে একটা লাল্টুস চেহারার ছবি লাগিয়েছেন আঙ্কেল।

বিল্টুরা ছবি বললেও ওটা ঋদ্ধিনাথেরই প্রতিছবি। ইচ্ছা করেই ওই ছবি লাগিয়েছে ঋদ্ধি। অবশ্য বিশেষ উদ্দেশ্য আছে ওর। এবং সেটা ইচ্ছা করেই গোপন রেখেছে। 

এখনও স্পষ্ট মনে আছে, সবে গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট করেছে ও। মাষ্টার্ডে ভর্তি হবে, ছবি চাই। তাই ছবিটা তোলা। তখন সত্যিই হিরোর মত চেহারা ছিল ওর। ঋষিতা তো প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেল। ঋষিতাকে খেপানোর জন্য প্রায়ই বলে, শুধু পড়া তো নয়, যারে বলে হাবুডুবু খাওয়া। মাষ্টার্ড শেষ করার আগেই পিঁড়িতে বসতে হল।

না বসে কি উপায় ছিল? সেকি পীড়াপীড়ি তোমার! শেষমেশ পীড়িতে বসেই পীড়াপীড়ির অবসান।

আমি পীড়াপীড়ি করতাম! অসম্ভব। নিজেকে যৌক্তিক করার চেষ্টা করে, সোনার আংটি আবার বেঁকা! কি, শুনেছ কোনদিন? জবাবের অপেক্ষা না করেই বলে, তবে আমি কেন......।

কে কাকে পীড়াপীড়ি করত, এই বিতর্ক প্রায়ই হত। ঋদ্ধিই জিইয়ে রেখেছিল। রাখবে নাই বা কেন? এটা দিয়েই তো ঋষিতাকে আবিষ্কার করে ও, নতুন করে। ঋষিতার চেহারার নতুনত্ব একদিন মুগ্ধ করেছিল বটে। কিন্তু সে তো কলেজ লাইফে। এখন এই বিতর্কগুলোই নতুন করে মুগ্ধতার টান তৈরি করে। আর এই টান দিনে দিনে অভিকর্ষজ বল হয়ে উঠেছে দু’জনের মধ্যে। 

আগের পাতা                  গল্প সংকলন                 তৃতীয় পাতা

মন্তব্যসমূহ

রচনাকাল অনুযায়ী গল্প : পড়ুন 👉 এখানে ক্লিক করে

আলী হোসেনের জনপ্রিয় গল্পগুলো পড়ুন

নূরের জ্যোতি

কেমনে রাখবো কুল / পটল গাছে হয়না পটল /  না ছোঁয়ালে ফুল -- সুর করে  গান গাই গল্পটির ইউনিকোড ফন্টে খুব শিঘ্রি প্রকাশিত হবে। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। Saturday, March 07, 2009 11:20:42 AM Ali Hossain H/O : Asraf Ali Nasker Brahmapur, Battala Bazar ( Near Post Office ) Kolkata-7000 96 Phone: 9432983876

জলপট্টি

আলী হোসেনের ছোটগল্প - জলপট্টি সেদিনের কথাগুলো ভাবতে বসলে মায়ার চোখ দুটো ভিজে যায়। সবে সুখের মুখ দেখেছে ওরা। প্রচণ্ড দুর্দিনেও যারা মাটির টানকে উপেক্ষা করতে পারে নি, অসময়টা যখন কাটতে চলেছে, ঠিক তখনই শিকড়টা গেল কেটে। যেন প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস থেমে যাওয়ার মুখেই  লাটাই থেকে সুতটা ছিড়ে গেল। সুত-কাটা ঘুড়ির মত পাক খেতে খেতে দশ-পুরুষের ভিটে ছেড়ে এসে পড়ল কলকাতায়; কংক্রিটের জঙ্গলে। যারা ভরসা দিল, ‘পথের শেষ কোথায়’ দেখাবে, তারা কেমন সরে গেল সেই পথেই কাটা রেখে। পরেশের কথায়, ‘না রিফিউজি হলাম, না পেলাম নিজের জমি-জিরেত বিকিয়ে কেনা জমির দখল’। তাই চোখের কোন থেকে জলের ক্ষরণ কমে গেলেও বুকের ভেতরের গভীর ক্ষত এখনও শুকোয়নি মায়ার। তবে এ ক্ষতে সুস্থতার প্রলেপ পড়েছিল একবার। নয় নয় করে সেও বছর পনের আগের কথা। পরেশ তখন ফুটপাতের সব্জিওয়ালা, রতন ক্লাস ফোর-এ। ‘একখান কথা কইবো’? পরেশ চোখ তোলে। চোখে চোখ রেখে ঘাড় নাড়ে; তার মানে, ‘বলুন’। ‘আপনে কি নতুন বাংলাদেশ থিকা আইছেন’? পরেশ এবারও ঘাড় নাড়ে, মানে, ‘হ্যাঁ’। তোমার লগে কতা কইয়া, চাল-চলন দেইখ্যা তো লেহাপড়া জানা মনে অইতাছে। আজ্ঞে, ইন্টারমিডিয়েট পাস। চাকরি কোরবা? পরেশ...

খোঁজ : চতুর্থ পাতা

গল্প : খোঁজ - আলী হোসেন। চতুর্থ পাতা ( গল্প সংকলন : দ্বিতীয় পিতা ) শুরু থেকে পড়ুন আগের পাতা                          গল্প সংকলন                       পঞ্চম পাতা ঋষিতা আজ নেই। সশরীরে। কিন্তু সে তার জীবন থেকে একেবারে বিচ্ছন্ন হয়ে যায় নি। হয় নি, তা আরও একবার প্রমান হয়ে গেল। আজ। আজও সে হেরে গিয়ে জিতে এসেছে। সে চাইলেই বিট্টুকে সপাটে একটা ঘুষি চালিয়ে দিতে পারতো। নিদেনপক্ষে একটা চড়ও। সে সামর্থও তার আছে। কিন্তু তারপর? বিট্টুরা কিভাবে রিয়্যাক্ট করত! এখন ভাবতেই শিউরে ওঠে শরীর। মধ্য-পঞ্চাশের ঋদ্ধিনাথ। পাঁচ বছর হল ঋষিতাও গত হয়েছে। ঈশিতা তো থেকেও নেই। তাই কোন পিছুটান তো তার ছিল না। তবু পারে নি। আর এতেই কি প্রমান হল না ঝগড়া নেই মানে ঋষিতা নেই, এও সম্ভব। ঋষিতার মূল্যায়ন এভাবেই করে এখন। ভাবে, জীবনের ধর্মও জলের মত। যে পাত্রে যায়, তার আকার ধরে। সময়-পাত্রে এক সময় সবই সয়ে যায়। ঈশিতাকে হারিয়ে যে শুন্যতা, তাও এক সময় সয়ে গিয়েছিল।  ভরে দিয়েছিল ঋষিতাই। কিন্তু বাইপাসের...