সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খোঁজ : শেষ পাতা

গল্প : খোঁজ - আলী হোসেন। শেষ পাতা

( গল্প সংকলন : দ্বিতীয় পিতা )

শুরু থেকে পড়ুন

আগের পাতা                  গল্প সংকলন                 পরের গল্প

বিশ্বাস সত্যিই করে ঋদ্ধি। লিপির সাথে কথা বলে কোন দিন মনে হয় নি, ওকে অবিশ্বাস করা উচিৎ। গুরুদেব বলেছিলেন, মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ। কিন্তু আজ কেন জানি না, মনের ভেতরটা খচ্ খচ্ করছে। তাই ঋদ্ধি নাথ এখন আড়ালে। একটু যাচাই করা খুব দরকার। কেননা, মানুষের প্রতি অন্ধবিশ্বাস করা যে মহাপাপ!

তবে হ্যাঁ, পাপ-পুন্যের হিসাব লিপি করে না।  বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যেকোন দিকে ঘোরাতে ওর কোন আপত্তি নেই। লিপির আম্মা বলতেন, জীবন বাঁচানো ফরজ। তাই তো সেদিন নিজের জীবন বাজি রেখে লিপিকে বাঁচিয়ে ছিল। মেলার ষষ্ঠ দিনের অপরাহ্নে, হঠাৎ-ই খাবারের দোকানে আগুন লেগে গেল। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ল মেলাময়। প্রচন্ড হুড়োহুড়ির মধ্যেই দু’পায়ের মাঝখান থেকে তুলে নিয়েছিল লিপিকে।

রহিমা নিজে নিঃসন্তান। তাই সুযোগটা হাতছাড়া করে নি। একই সাথে দুটো, জীবন বাঁচিয়ে পুন্য, আর তাকে নিয়ে পালিয়ে এসে পাপ করেছিল রহিমা। লিপির মতে, পরের মত নিজের জীবন বাঁচানোও ফরজ। তাই আম্মার মত সেও কোন পাপ করছে না। সেকারনেই পাপকে সে পরোয়া করে না, করে না জীবনের চাহিদাকে উপেক্ষাও? সব কিছুর জন্যেই সে আজ তৈরি।

কিন্তু ঋদ্ধির কী হল? দু’ঘন্টা পার হয়ে গেল! এখনো ফিরছে না! ভাবনার সাথে সাথে লিপির চোখ দুটো ঘুরপাক খাচ্ছে ঘরময়। ঋদ্ধির বেডরুম থেকে টয়লেট মায় ব্যালকোনির আনাচ-কানাচ। এগুলোর ডেকরেশন থেকে বোঝার চেষ্টা করছে ঋদ্ধির রুচিবোধ। কি ভালোবাসে, কেমন মানুষ সে? সংসারের অগোছালো চেহারা বলছে, সে একা। দামি মার্বেলের মেঝে, আর কাঠের ওয়াড্রোব ছাড়া অন্য আসবাবগুলোর আধিকাংশই স্টিলের। দেওয়াল জুড়ে রয়েছে চোখ জুড়ানো ওয়াল পেন্টিং।

ঘরে ঢুকতেই একটা আলাদা আবহাওয়ার গন্ধ পায় লিপি। নির্জন ফ্লাট-জুড়ে মদিরার ম ম গন্ধ। এমন নির্জনতার গোপন গন্ধ মনকে বল্গাহীন করে দেয়। ন্যায্যতার আবরন ছিড়ে বেরিয়ে আসে ভিতরের ভিক্ষুটা। চৈত্রের মাটির টানে যেমন আকাশ ভাঙে, তৃষ্ণার্ত মাটির বুকে, তারপর ভিজিয়ে দেয় মাটি, আলগা হয় ভিতরের জমিন, লিপির ভেতরের আকাশটাও তেমনি ভেঙেছে, গত সপ্তাহে। ভিক্ষুটাকে ভিজিয়ে দিয়েছে, আলগা হয়েছে ওর মানব জমিন। প্রয়োজন এখন একজন বর্গাদার। ঋদ্ধিনাথ কি পারে না এ দায়িত্ব নিতে? পারে। নিশ্চয় পারে। ওকে পারতেই হবে। নইলে কিসের বন্ধু ও। কিসের টানে গড়েছে এই সম্পর্ক?

হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে ভাবনার সুতো কেটে যায় লিপির। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ধীর পায়ে এগিয়ে যায়, দরজায়। লক খুলতেই হতবাক হয় দু’জনেই। কাকে দেখছে লিপি? এ তো ঋদ্ধি নয়! আর ঋদ্ধি? ঋদ্ধি দেখছে লিপিকে। এক অসাধারন শিল্পকর্মের মত মূর্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সামনে। যেন অশ্লীল হয়ে ওঠার ভয়ে, শিল্পী তার শরীরের কোথাও এক টুকরো সুতো রাখে নি।

পরদিন, ঋদ্ধির ঘরে পাওয়া গেল একটুকরো কাগজ। যাতে লেখা, এখানকার সব কিছুই তোমার। আমি না ফেরা পর্যন্ত বাড়ি ছেড়ে যেও না। কারণ, আমি কোন কিছু আর দ্বিতীয়বার হারাতে চাই না।

লিপি এখনও জানে না, সে আসলে ঈশিতা। আর দু’বুকের মাঝ-বরাবর ঠিক নিচে, ছোট্ট বেলায় ফোড়াটা যে কেটে দিয়েছিল, সে এই ঋদ্ধি - ওর বাবা। ঋদ্ধি দেখেছে, সেলাই না দেওয়া জায়গাটা গতকালও ফুলে ফুলে উঠছিল; নিশ্বাস-প্রশ্বাসের  তালে তালে, বৃত্তাকারে।

-----------*********--------

আগের পাতা                  গল্প সংকলন                 পরের গল্প


29 ডিসেম্বর 2009, 10.48.37



Ali Hossain
Sampriti Apt. Flat No. 3,
2002 Brahmapur, Badamtala,
Opp: Niva park (Ph-I),
Kolkata 700096

Phone : 9432983876

Email: nehacomputeraids@gmail.com

মন্তব্যসমূহ

রচনাকাল অনুযায়ী গল্প : পড়ুন 👉 এখানে ক্লিক করে

আলী হোসেনের জনপ্রিয় গল্পগুলো পড়ুন

নূরের জ্যোতি

কেমনে রাখবো কুল / পটল গাছে হয়না পটল /  না ছোঁয়ালে ফুল -- সুর করে  গান গাই গল্পটির ইউনিকোড ফন্টে খুব শিঘ্রি প্রকাশিত হবে। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। Saturday, March 07, 2009 11:20:42 AM Ali Hossain H/O : Asraf Ali Nasker Brahmapur, Battala Bazar ( Near Post Office ) Kolkata-7000 96 Phone: 9432983876

মড়ক - আলী হোসেন

মড়ক আলী হোসেন      কোনটা সময় আর কোনটা অসময়, সময়টা চলে না গেলে যেন বোঝা যায় না। বলা ভালো, ঠিকঠাক বোঝা যায় না। বিজ্ঞজনেরা তো তা-ই বলে। রতন বিজ্ঞজনও নয়, সময়ের গলিঘোঁজ খুঁজে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও তার কম্ম নয়। তবে তার সময় যে ভালো যাচ্ছে না, সে বিলক্ষণ জানে। জানে বলেই বোধ হয় বিষন্ন হয় মন, কখনও সখনও ভারিও। বিশেষ করে বাড়ির উল্টোদিকের ফুটে আকাশ ছোঁয়া মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানির বিল্ডিংটা দেখলেই তার বুকের ভেতরটা যেন চিনচিন করে ওঠে।      কিন্তু মন খারাপ করে যে কোন লাভ নেই। বাবা পরেশ পাড়ুই বলতেন, ‘কপালের লিখন বল বা ভাগ্যের চাকা – কোনটারই নিয়ন্ত্রন আমাদের হাতে নেই’। রতনেরও তাই মনে হয়। না হলে কি আর ওকে মোটর মেকানিক হয়ে জীবন কাটাতে হয়? সারাদিন গ্যারেজে কাজ, তারপর কালিঝুলি মেখে ভূত হয়ে বাড়ি ফেরা। কবে কবে যেন গায়ের রংটাই গেল পালটে। মা বলে, বাবার মতই গায়ের রঙ ছিল ওর। পড়াশুনায়ও দারুণ। বাবার ইচ্ছা ছিল, ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে; রতনও তাই ভাবতো। কিন্তু ভাবলেই কি আর সব হয়? কপালই তো ডাঁড়াশের ইঁদুর গেলার মত মোড়া মেরে ভরে দিল গ্যারেজে। তাই ডাক্তার হয়ার স্বপ্ন, ভাঙলো মোটর মেকানিক হয়ে।      রতনের জীবনে সেই শুরু অসময়ের

জলপট্টি

আলী হোসেনের ছোটগল্প - জলপট্টি সেদিনের কথাগুলো ভাবতে বসলে মায়ার চোখ দুটো ভিজে যায়। সবে সুখের মুখ দেখেছে ওরা। প্রচণ্ড দুর্দিনেও যারা মাটির টানকে উপেক্ষা করতে পারে নি, অসময়টা যখন কাটতে চলেছে, ঠিক তখনই শিকড়টা গেল কেটে। যেন প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস থেমে যাওয়ার মুখেই  লাটাই থেকে সুতটা ছিড়ে গেল। সুত-কাটা ঘুড়ির মত পাক খেতে খেতে দশ-পুরুষের ভিটে ছেড়ে এসে পড়ল কলকাতায়; কংক্রিটের জঙ্গলে। যারা ভরসা দিল, ‘পথের শেষ কোথায়’ দেখাবে, তারা কেমন সরে গেল সেই পথেই কাটা রেখে। পরেশের কথায়, ‘না রিফিউজি হলাম, না পেলাম নিজের জমি-জিরেত বিকিয়ে কেনা জমির দখল’। তাই চোখের কোন থেকে জলের ক্ষরণ কমে গেলেও বুকের ভেতরের গভীর ক্ষত এখনও শুকোয়নি মায়ার। তবে এ ক্ষতে সুস্থতার প্রলেপ পড়েছিল একবার। নয় নয় করে সেও বছর পনের আগের কথা। পরেশ তখন ফুটপাতের সব্জিওয়ালা, রতন ক্লাস ফোর-এ। ‘একখান কথা কইবো’? পরেশ চোখ তোলে। চোখে চোখ রেখে ঘাড় নাড়ে; তার মানে, ‘বলুন’। ‘আপনে কি নতুন বাংলাদেশ থিকা আইছেন’? পরেশ এবারও ঘাড় নাড়ে, মানে, ‘হ্যাঁ’। তোমার লগে কতা কইয়া, চাল-চলন দেইখ্যা তো লেহাপড়া জানা মনে অইতাছে। আজ্ঞে, ইন্টারমিডিয়েট পাস। চাকরি কোরবা? পরেশ মাথ